রবিবার ● ২৯ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
কমলনগরে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে শত শত একর জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে কৃষি জমি। কমতে শুরু করেছে ফসলের উৎপাদন।
স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৃষকদের প্রলোভন দেখিযে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে ভাটা মালিকরা। আবার মেঘনার ভাঙন কবলীত এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে মেঘনা পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
জানা যায়, উপজেলার পাটারিরহাট, চরফলকন, সাহেবেরহাট, চরমার্টিন, চরকালকিনি, তোরাবগঞ্জ, চরকাদিরা ও হাজিরহাট ইউনিয়নের শ্রমিকরা ফসলি জমির মাটি কেটে ট্রাক্টর ট্রলি করে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়। আবার মেঘনা পাড়ে যে যার মত করে ভেকু মেশিনের মাধ্যমেও ফসলি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। কিছু দালাল শ্রেণি জমির মালিকদের ভুল বুজিয়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমতে শুরু করলেও এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের সতর্ক করা হচ্ছে না।
জমির মূল উর্বরতা শক্তি থাকে মাটির উপরিভাগে। আর এ মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিলে তার উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে সময় লাগে ১০-১২ বছর। কমলনগরে যেভাবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০-১২ বছর পর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। তাই এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে উর্ধ্বতন মহলের আশু দৃষ্টি কামনা করছেন তারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চরলরেন্স ইউনিয়নে অবস্থিত মেসার্স এমএনএস ইটভাটা মালিক আনোয়ার হোসেন নিশাদের লোকজন নবীগঞ্জ এলাকার মেঘনা নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে মাটি কেটে ট্রাক্টরট্রলি করে তার ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ভেকু মেশিন দিয়ে ওইস্থানে পুকুর তৈরী করে মাটি নিয়ে গেছেন তিনি। এক দিকে ভাঙন আতঙ্ক অন্য দিকে মাটি লুটের মহোৎসব চলছে মেঘনা পাড়ে। জানা যায় এ উপজেলায় প্রায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। সব ভাটা মালিকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মাটির টপ সয়েল কেটে ইট তৈরি করছেন। আবার এদের বেশিরভাগ ইটভাটার নেই কোন ভাটা পরিচালনা করার মত কোন কাগজ পত্র। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও এখানকার কর্তা ব্যাক্তিরা নিরব ভুমিকায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে মেসার্স এম এনএস ইটভাটা মালিক আনোয়ার হোসেন নিশাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার এখানে ৩শ’ শ্রমিক কাজ করে ; আপনারা ওদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন। আমরা আর ইটভাটা করবো না।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক বলেন, কৃষি জমির উপরের ৬ ইঞ্চি মাটি ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কৃষকদের টপ সয়েল বিক্রি করতে নিরুৎসাহিত করে থাকি। তারপরও কোন কৃষক এ ধরনের কাজের সাথে জড়িত থাকলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমলমগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।