বুধবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, নিরব প্রশাসন
কমলনগরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, নিরব প্রশাসন
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে অনুমোদনহীনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অনেকগুলো ইটভাটা। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন বনাঞ্চল থেকে গাছ কিনে এসব অসাধু ভাটা মালিকরা জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার করছেন। ভাটাগুলো থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও সামাজিক বনায়ন। আবার এক শ্রেণির দালালদের মাধ্যমে জমির মালিকদের ম্যানেজ করে জমির টপ সয়েল কেটে নিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে ফসল উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩তে বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরুপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। আর এ আইন অমান্য করলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগ, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।কিন্তু প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার কারণে কমলনগরের অধিকাংশ ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে দেদারছে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, তাদের অফিসের তালিকাভুক্ত ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। ওই তালিকায় ১০টি বৈধ আর ৮টি অবৈধ ঘোষনা করা হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের তালিকার বাহিরে আরও ৬-৭টি ইটভাটা রয়েছে।
সরজমিন উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের লতিফ ব্রিকফিল্ড, মেঘনা ব্রিকফিল্ড, সুমাইয়া ব্রিকস্, চরপাগলা এলাকার মদিনা ব্রিকফিল্ড, হাজিরহাট ইউনিয়নের মা ফাতেমা ব্রিকফিল্ডসহ কয়েকটি ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায় লাইসেন্সবিহীন এসব ইটভাটার চারপাশে মজুত করে রাখা হয়েছে কয়েক টন লাকড়ি। ভাটাতে লাকড়ি পোড়ানোর ফলে চিমনি দিয়ে প্রচণ্ড বেগে ধোঁয়া বের হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় আশপাশের পরিবেশ দিনের বেলায়ও ঘন কুয়াশার মত দেখা যাচ্ছে। উপজেলার কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এ সব অবৈধ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিচ্ছিত করেছেন।
অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনা করা ও কাঠপোড়ানোর বিষয়ে লতিফ ব্রিকফিল্ডের স্বত্বাধিকারী মো. বাহার মোল্লাহ’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশাসন যদি আমাদের অনুমোদন না দেয় তাহলেকি আমরা ইটভাটা বন্ধ করে দেব ? তা ছাড়া প্রাথমিকভাবে বাংলাভাটা দিয়ে ব্রিকফিল্ড শুরু করতে হয়। এ মুহূর্তে কাঠ পোড়ানো ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।
মেঘনা ব্রিকফিল্ডের মালিক মো.নিজাম উদ্দিন ও সুমাইয়া ব্রিকসের মালিক জয়নাল কোম্পানী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাদের কোন অনুমোদন না দেওয়ায় আমরা উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আমাদের ভাটা পরিচালনা করছি। লতিফ ব্রিকফিল্ডের মালিক বাহার মোল্লা এ সব ম্যানেজ করছেন বলে জানান তারা।
পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর জেলা সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ বলেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে বার বার অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া কোর্ট থেকেও অবৈধ ভাটা বন্ধের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও কেন বন্ধ হচ্ছে না আমরা জানিনা।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো বন্ধে আমরা মোবাইল কোর্ট করে জরিমানা করেছি। আবারও অভিযানে নামবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।