রবিবার ● ৭ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » অক্সফোর্ডে গবেষণার সুযোগ পেলেন কমলনগরের আতাউল করিম
অক্সফোর্ডে গবেষণার সুযোগ পেলেন কমলনগরের আতাউল করিম
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : পৃথিবীরসেরা বিদ্যাপীঠ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা (ডক্টর অফ ফিলোসফি’-'ডিপিল’) করার সুযোগ পেয়েছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মোহাম্মদ আতাউল করিম । তিনি বিশ্ববিখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধীন ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি ল’(মেধাসত্ব আইন) নিয়ে গবেষণা করবেন। স্বপ্নের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির চান্স পাওয়ার পরপরই ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
মোহাম্মদ আতাউল করিম উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়নের মরহুম মৌলভী আবদুল কাদেরের ছেলে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপিল(পিএইচডি) তে চান্স পাওয়ার বিষয়টি শনিবার তিনি নিশ্চিত করেছেন। এসময় তিনি আরো জানায়, এর আগে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে ডিপিল ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন, বাংলাদেশের সংববিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন।
আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং আইন গবেষক মোহাম্মদ আতাউল করিম বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এর আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন তালিকাভূক্ত আইনজীবি।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, পৃথিবীর প্রাচীনতম এবং ঐতিহাসিক অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি চালু হয়েছিল ১০৯৬ সালে । প্রায় এক হাজার বছর সময় ধরে সারা পৃথিবীর শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, রাজনীতি বিষয়ে অসামান্য অবদান রেখে আসছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ ৩০জন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর প্রাচীন এবং জগত বিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। মেধার অত্যন্ত তীব্র প্রতিযোগিতা ও হাজার বছর ধরে আর্ন্তজাতিক মর্যাদাপূর্ন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝে মধ্যে কিছু সৌভাগ্যবান বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। এরকম সুভাগ্যবান ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম একজন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে মোহাম্মদ আতাউল করিম।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং আইন গবেষক মোহাম্মদ আতাউল করিম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এবং সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইনবিষয়ক বহু প্রতিষ্ঠানের গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন। যেগুলোর মধ্যে জার্মানির আইপিআর, এরিকসন, সুইজারল্যান্ডে জাতিসংঘের দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন অন্যতম।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (সম্মান) এবং এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়াও তুরস্কের আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি -ল’(পেটেন্ট এবং ডিজাইন আইন) বিষয়ে এলএলএম এবং জার্মানির বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট থেকেও একই বিষয়ে এলএলএম ডিগ্রী অর্জন করেন।
পৃথিবীর বহু বিখ্যাত আইন বিষয়ক জার্নালে তার অনেক মৌলিক গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। আইন বিষয়ে গবেষণায় অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন স্বর্ণপদক পান।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ছোট বেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী আতাউল করিম পড়াশোনা শুরু করেন, লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় কমলনগর উপজেলার উত্তর মার্টিন গ্রামে। সেখানে তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে বাবার শিক্ষকতা চাকুরীর সুবাদে তিনি ঢাকা শহরে গিয়ে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হন। ২০০২ সালে তিনি মাধ্যমিক এবং ২০০৪ সালে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ২০১২ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকত্তোর ডিগ্রী অর্জন করেন।
পড়াশোনার পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনেও আতাউল করিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপরিচিত মুখ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশেনে তার অংশ গ্রহনে প্রচারিত নোয়াখাইল্লা ভাষার একটি বির্তক প্রতিযোগিতায় কোটি দর্শকের মন কেড়েছিল।
৩ ভাই এবং ২ বোনের মধ্যে আতাউল করিম তার বাবা মায়ের ৩য় সন্তান। তার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। মা রোকেয়া বেগম একজন গৃহিনী।
আতাউল করিম জানায়, ভবিষ্যতে তিনি বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি “ল”(বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি) নিয়ে কাজ করতে চান। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা শেষে তিনি সে জ্ঞান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে দিতে চান।
বিশ্ববিখ্যাত অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার সুযোগ পাওয়ায় তিনি দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করেছেন।