রবিবার ● ৬ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে রাতভর নির্যাতনের পর অসম বিয়ের নাটক সাজালেন আ’লীগ নেতা!
কমলনগরে রাতভর নির্যাতনের পর অসম বিয়ের নাটক সাজালেন আ’লীগ নেতা!
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার পাটোয়ারী হাট ইউনিয়নে এক অসহায় পরিবারের কিশোরকে রাতভর নির্যাতন করে বয়স্ক মহিলার সাথে অসম বিয়ের নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। শনিবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার রিপন ও তার মা মিনরা বেগম।
এর আগে গত ২৫ জুলাই রাতে পাটোয়ারী হাট ইউনিয়নে বিধবা ৩ সন্তানের জননী হোসনেয়ারা বেগম (৫০) ও কিশোর রিপনের(১৭) সাথে এ বিয়ের নাটক সাজান ওই ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন ও তার লোকজন।
নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ওই কিশোর।চিকিৎসার পরে কিশোর রিপন আবারো নির্যাতনের ভয়ে পলাতক থাকায় তার অসহায় মা মিনারা বেগমকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশসহ বিভিন্নধরনের হুমকি ধমকি দিচ্ছেন তারা।
জানা যায়,গত ২৫ জুলাই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চৌমুহনী থেকে নিজ বাড়িতে আসেন কিশোর রিপন।পরে তার মা মোবাইলে টাকা রিচার্জ ও পান কেনার জন্য স্থানীয় পাটোয়ারী হাট বাজারে পাঠান। বাজারে যাওয়ার পথে পার্শ্ববর্তী বাড়ির বিধবা হোসনেয়ারা জরুরী কথা আছে বলে তার ঘরে ডেকে নেন।এই সুযোগে ওই এলাকার আজিজল হক আইজল,মাইনউদ্দিন ওই ঘরে ঢুকে রিপনকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করেন।এরমধ্যে আবুকালাম, বেলায়েত এসে ওদের সাথে এক হয়ে রিপনকে পিছমোড়া বেঁধে পেলেন।এরপর এই চারজন মিলে মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে রাতভর রিপনকে অমানুষিক নির্যাতন করেন।ঘটনা জানাজানি হলে কিশোরের মা মিনারা বেগম তার নির্দোষ ছেলেকে নির্যাতন না করতে এবং ছেড়ে দিতে তাদের হাতে পায়ে ধরেন।এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সংরক্ষিত নারী সদস্যের স্বামী জামাল হোসেন এসে রিপনকে এলোপাতাড়ি চড় থাপ্পড় দেওয়া শুরু করেন।উপায়ান্ত না পেয়ে কিশোরের মা মিনারা বেগম তার ছেলেকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে ও ছেড়ে দিতে জামালকে ১০ হাজার টাকা দেন।টাকা পেয়েও তাকে না ছেড়ে উল্টো জামাল ভোর রাতে স্থানীয় কাজীর সহকারী মাও.আবদুল ওয়াহেদ ও মাও.শরীফকে ডেকে আনেন।ওই সময় মাও,আবদুল ওয়াহেদ সাদা কাগজে রিপন ও হোসনেয়ারার নাম-ঠিকানা ও সাক্ষর নেন। এবং মাও.শরীফ বিয়ে পড়ান।
ভুক্তভোগী কিশোর রিপন জানান,পরিকল্পিতভাবে আমাকে ডেকে নিয়ে জামাল হোসেনের নেতৃত্বে আবু কালাম,মাইনদ্দিন,আজিজল হক আইজল
রুহুল আমিন,মিলন মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।টাকা না দিলে বিয়ে করতে বলেন।আমি রাজি না হওয়ায় সারারাত আমার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।ভোররাতে সাদা কাগজে আমার সাক্ষর নিয়ে বিয়ে পড়ান।নির্যাতনের কারণে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আমি এখনো ঠিকমতো হাটতে পারিনা।আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
ভুক্তভোগীর মা মিনারা বেগম বলেন,পাটোয়ারির হাট যাওয়ার পথে আমার ছেলেকে কৌশলে আমার বয়সী হোসনেয়ারার ঘরে নেয়।নির্যাতন না করে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে জামাল হাজি ১০ হাজার টাকা নেয়।তারপরেও আমার ছেলেকে নির্যাতন করে ভোর রাতে হুজুর ঢেকে বিয়ে পড়ায়। এখন আমার ছেলে বাড়িতে আসতে পারেনা তাদের ভয়ে।তারা আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে হোসনেয়ারা বেগমের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে বার বার ফোন দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা আজিজল হক আইজল ও মাইনউদ্দিন জানান,রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হৈচৈ শুনে আমরা সে ঘরে যাই।সেখানে রিপনকে দেখি।হোসনেয়ারা আমাদেরকে রিপনের সাথে সম্পর্ক থাকার কথা জানান। আমরা তাকে মারধর করিনি।তবে হোসনেয়ারা ঘটনা সাজিয়েছে তা বুঝা গেছে।পরে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
পাটোয়ারি হাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো:জামাল হোসেন তার উপর রিপন ও রিপনের মায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনেছি, রিপনের সাথে ও মহিলার ৩ বছরের সম্পর্ক।সামাজিক চাপে আমি বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া কাজির সহকারী মাও,আবদুল ওয়াহেদ সেলিম বলেন,ভোর রাতে জামাল হোসেন আমাকে ফোন দিয়ে ওখানে নেন।সেখানে উপস্থিত হয়ে বুঝতে পারলাম,ঘটনাটি সাজানো। ছেলের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আমার কাছে রেজিস্ট্রি বই না থাকায় বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়নি।
কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বলেন,এই ব্যাপারে কেউ অভিযোগ দেয়নি।অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।