সোমবার ● ১৬ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে চেক জালিয়াতির মামলায় ইউএনও’র গাড়ি চালক কারাগারে
কমলনগরে চেক জালিয়াতির মামলায় ইউএনও’র গাড়ি চালক কারাগারে
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে চেক জালিয়াতির মামলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মো. সোহেলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রোববার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কমলনগর আদালতের বিচারিক হাকিম মো. তারেক আজিজ দীর্ঘ শুনানির পর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সোহেল উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাহান চৌকিদারের ছেলে। এছাড়াও নারী কেলেঙ্কারী, একাধিক চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন প্রতারণার প্রমাণ রয়েছে সোহেলের বিরুদ্ধে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, চরকাদিরা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী কৃষক মো মুসলিমকে ওএমএস চালের ডিলার বানানোর কথা বলে তাঁর কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে সোহেল। কিন্তু মুসলিম নগদ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে সোহেল তার কাছ থেকে ইসলামি ব্যাংক হাজিরহাট শাখার তিনটি স্বাক্ষরিত ব্ল্যাঙ্ক চেক, নন জুডিশিয়াল অলিখিত স্ট্যাম্প ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ও ছবি নেয়। কিছু দিন পর মুসলিম তার ডিলারশীপ না হওয়ায় সোহেলের কাছে চেক, স্ট্যাম্পসহ সকল কাগজ পত্র ফেরত চাইলে সে দিতে তালবাহানা করে। পরে চলতি বছরের ১৫জানুয়ারী সোহেল স্বাক্ষরিত ৩টি চেকের একটিতে ৯লাখ টাকা লিখে ব্যাংকে টাকা উত্তোলনের জন্য করুনানগর এলাকার তাঁর সহযোগী হারুনকে পাঠায়। ব্যাংকের ম্যানেজার ৯লাখ টাকার চেক দিয়েছেন কিনা জানতে মুসলিমকে ফোন করে। তখন ম্যানেজার মুসলিমকে ব্যাংকে আসতে বলেন। মুসলিম তার লোকজন নিয়ে হাজিরহাট ইসলামী ব্যাংক শাখায় গেলে সোহেল তাঁর সহযোগী হারুন স্থানীয় করুনানগর বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শরাফুদ্দিন আহমেদ বাবুলের কাছে চেক জমা দেয়। ওই সময় ঘটনাটি মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় বাজার কমিটির সভাপতি বাবুল ওই চেকটি সবার সামনে পুড়ে ফেলে এবং বাকি ২টি চেক ও স্ট্যাম্পসহ সকল কাগজ পত্র ফেরত দেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু সোহেল বাকি চেক ফেরত না দিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারী আরেকটি চেকে ৩লাখ ৯০হাজার টাকা উল্লেখ করে চেক ডিজঅনার করায়। পরের দিন মুসলিমকে মিথ্যা লিগ্যাল নোটিশ পাঠায় এবং পরে আদালতে মামলা করে। বিষয়টি নিয়ে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বৈঠক হলেও কোন সমাধান না হওয়ায় মুসলিম লক্ষ্মীপুর সিনিয়র কমলনগর আদালতে সোহেলসহ ৫ জনকে আসামী করে চেক জালিয়াতির মামলা করলে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। পিবিআই নোয়াখালীর পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ পাটওয়ারী দীর্ঘ তদন্তের পর ২২মে আদালতে বিভিন্ন প্রতারণার প্রমাণসহ সোহেলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেন। আদালত রোববার মামলার শুনানীর পর সোহেলকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এছাড়াও সোহেলের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারি চেক প্রতারণার আরো প্রমাণ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করেন।
মামলার বাদি মো মুসলিম বলেন, আমি জন্মের পর থেকে কৃষি কাজের সাথে জড়িত। আমার মেয়ের জামাই ওমানে থাকার কারণে আমি হাজিরহাট ইসলামী ব্যাংকে একটি একাউন্ট করি। সোহেল আমার পাশ্ববর্তী হওয়ায় তার সাথে আমার সু-সম্পর্ক ছিলো। সে আমাকে চালের ডিলার বানানোর প্রস্তাব দিলে আমি এ সম্পর্কে কিছু জানিনা বলে তাকে জানাই। তখন সোহেল আমার কিছুই করা লাগবে না সব আমি করবো বলে আমার থেকে ৩টা চেক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। এখন আমার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমি আদালতে শরণাপন্ন হয়েছি। আমি আদালতের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, সোহেলের বিরুদ্ধে আদালতের মামলা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। উপজেলা প্রশাসন তার কোন অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ততা নেই।