সোমবার ● ২০ নভেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, উৎপাদন লক্ষমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
কমলনগরে ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, উৎপাদন লক্ষমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে টানা বর্ষণ এবং প্রবল বাতাসে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে পাকা-আধাপাকা আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও চলতি মৌসুমে ৩৪০ হেক্টর শীতকালীন সবজী, গম, খেশারী ডাল, পান সহ বিভিন্ন ফসল এখন পানিতে ভাসছে। গত ২৪ অক্টোবর আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’এর প্রভাবে মাঝারী বর্ষনে আমনের কোন ক্ষতি না হলেও আগাম সবজী আবাদ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত শুক্রবার মিধিলি’র প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বর্ষণে কমলনগরের কৃষি অঞ্চলের পুরো ফসলী জমিই প্লাবিত হয়েছে। এতে আমন ধান ও সবজি নষ্ট হয়ে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও টানা বৃষ্টি প্রচন্ড ঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাঁচাপাকা ঘর-বাড়ি, গাছপালা ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মেঘনা নদীতে নোঙর করা প্রায় দুই শতাধিক মাছধরা নৌকা ঝড়ের আঘাতে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপসী, বি-৫২, বিআর-২২, ২৩, ৩৪, বি-৪৯, ৮০, ৮৭, ৯৪, গুটিস্বর্ণা, হরি এবং স্থানীয় জাতের ১৯হাজার ৩শ’৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ করা হয়। এ সব আবাদি জমিতে ৭৭হাজার ৪শ’ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র প্রভাবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে আমন ধান তলিয়ে যাওয়ায় লক্ষমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ দাবি করছে সবজির তেমন কোন ক্ষতি না হলেও আমন ধানের গড়ে ১০% ক্ষতি হতে পারে। তারপরও পুর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমান নির্ণয় করতে তাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। এদিকে কৃষকদের দাবি টানা বৃষ্টি ও প্রচন্ড বাতাসে সকল ধান পানিতে মিশে গেছে। এতে তাদের ক্ষতির পরিমান প্রায়ই অর্ধেকের বেশি।
উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৪নাম্বার ওয়ার্ডের কৃষক শাহ আলম বলেন, এ বছর তিনি ধার দেনা করে ৭২শতক জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। এতে তার ১৫হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। হঠাৎ ঝড়ে তার সকল ধান মাটির সাথে মিশে গেছে। তাঁর দাবি ঝড় না হলে ১৬-১৭ মন ধান তিনি ঘরে তুলতে পারতেন। এখন হয়তো ৫-৭মন পেতে পারেন বলে ধারনা করছেন তিনি।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ও হাজিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান মো নিজাম উদ্দিন বলেন, ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও জেলেদেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি স্ব স্ব বিভাগের উদ্যোগে ক্ষতির পরিমানের তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি।
কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো শাহীন রানা বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পুর্নাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তালিকা তৈরি করলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘুর্ণিঝড় মিধিলি’র আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোন বরাদ্দ আসলে তালিকা অনুযায়ী তাদের মাঝে বন্টন করা হবে।