শুক্রবার ● ২২ মার্চ ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সাজানো পরীক্ষার নাটক, আদালতের স্থগিতাদেশ
কমলনগরে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে সাজানো পরীক্ষার নাটক, আদালতের স্থগিতাদেশ
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ৪টি পদে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে পরীক্ষার নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহমেদ উল্যাহ সবুজের বিরুদ্ধে।
এসব প্রার্থীদের মধ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সভাপতির মামা এবং প্রধান শিক্ষক পদে অপর একজনকে নিয়োগ প্রদানের পূর্ব নির্ধারিত রয়েছে বলে জানা যায়।
১৫ দিন পূর্বে পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদানের নিয়ম থাকলেও ৪ দিন আগে সভাপতির ভাই চরমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েম মাহমুদ প্রার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণ করেছেন। তিনি বিদ্যালয়ের কোন পদে নেই।
২৩ ই মার্চ শনিবার প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও দুই জন কর্মচারী নিয়োগের নাটক সাজান সভাপতি। এসব অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আবদুল ওয়াদুদ বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) লক্ষ্মীপুর যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে অভিযোগ দিলে আদালতের বিচারিক হাকিম মো.নুরুল আফছার দীর্ঘ শুনানির পর ওই বিদ্যালয়ের সকল নিয়োগের স্থগিতাদেশ দেন।
এর আগেও তিনি জেলা প্রশাসক বরাবরে নিয়োগ বানিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ দেন।
এছাড়াও উপজেলার দক্ষিন চর মার্টিন চৌধুরী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহমেদ উল্যাহ সবুজের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও রয়েছে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায় ২০২০ সালের ৫ই মে উপজেলার দক্ষিন চর মার্টিন চৌধুরী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রদান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন মারা যান। তার মৃত্যুর দুই দিন পর তখনকার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এড আনোয়ারুল হক ওই বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেন। সাবেক সাংসদ প্রতিনিধি এড আনোয়ারুল হক এ এলাকার না হওয়ায় তিনি চলে যাওয়ার পর আহমেদ উল্যাহ সবুজ স্থানীয় লোক হওয়ায় কৌশলে এডহক কমিটির সভাপতি হন। দীর্ঘ তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে তার কিছু আত্মীয় স্বজন ওই বিদ্যালয়ে থাকায় তার অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা বেড়ে যায়। পরে ২০২৩ সালের ২৫ই সেপ্টেম্বর বিকালের মিটিং করা সিদ্ধান্ত থাকলে সভাপতি তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতে মিটিং করেন। রাত ১০টার ওই মিটিংয়ে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে রেজুলেশন পরে লেখা হবে বলে তিনি খাতা নিয়ে যায়। ওই মিটিংয়ে বিদ্যালয়ের শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে সিদ্ধান্ত দেখানো হয়। যা স্বাক্ষরকারী সদস্যগণ অবগত নন। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক নয়াদিগন্ত ও আলচিশত পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অফিস সহায়ক ও নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
এর পর ওই বছরের ২৬ অক্টোবর আবারও ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের ডাক দেন তিনি। ওই মিটিংয়ে উপস্থিত সদস্যগণ থেকে পরপর দুটি অলিখিত রেজুলেশনের খাতায় স্বাক্ষর আদায় করেন। রেজুলেশন পরে লিখা হবে বলে রেজুলেশন বই, নোটিশ বইসহ আনুসাঙ্গিক কাগজ পত্রাদি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল ওয়াদুদ থেকে সভাপতি জোরপূর্বক তার নিজ আয়ত্বে নিয়ে যান।
পরে ওই মিটিংয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত দেখিয়ে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতি পত্র প্রেরণ করার পরের দিন তাকে বিভিন্ন অনিয়ম উল্লেখ করে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রেরণ করেন। একই রেজুলেশনে জুনিয়র শিক্ষক সভাপতির আপন চাচা জয়নুল আবেদিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করেন।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিভিন্ন পদে প্রাপ্ত আবেদন পত্র ও আবেদন সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্র প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষের লকারে না রেখে জোরপূর্বক তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।
আবেদনপত্র গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় আবেদনকারীদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক পদের আবেদনে তার নিকটতম আত্মীয় রয়েছে। সহঃ প্রধান শিক্ষক পদের আবেদনে রয়েছে তার আপন মামা। অফিস সহায়ক পদে রয়েছে তার আরেক মামাতো ভাই। নিরাপত্তাকর্মী পদে রয়েছে তার ফুফাতো ভাই। ৪টি পদের মধ্যে সব কয়টি পদেই তার আত্মীয় নিয়োগ করার চক্রান্ত করেন আহমেদ উল্যাহ সবুজ। এছাড়াও বিদ্যালয়ে কর্মরত সহঃ শিক্ষক মো.জয়নুল আবেদিন (ইসলাম শিক্ষা) বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তিনি সভাপতির আপন চাচা। বিদ্যালয়ে কর্মরত সহকারি শিক্ষক নুরুন্নবী চৌধুরী (শরীরচর্চা) তিনিও তার আপন চাচা। মোঃ নুরুল কাওছার সহঃ প্রন্থাগারিক তার আপন জেঠাতো ভাই এবং সহেল নৈশ প্রহরী তার আপন চাচাতো ভাই।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য বলেন, ওই বিদ্যালয়ে সবুজের চাচাসহ ৪জন চাকরি করছেন।এখন আবার কৌশলে প্রধান শিক্ষকসহ চারজন নিয়োগ দিতে চান। এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, আত্মীয় স্বজন পুনর্বাসনের কারখানা। তার এ সব অপকর্মের মুক্তি চায় এলাকাবাসী।
ওই বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সবুজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। বর্তমান নিয়োগে চারজনই তার আত্মীয়কে নিয়োগ দিতে আমাকে চাপ প্রয়োগ করেন। তার অন্যায় আবদারে আমি সাড়া না দেওয়ায় সে কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাদা রেজুলেশন স্বাক্ষর নিয়ে কোন কারণ ছাড়াই আমাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থেকে সরিয়ে তার চাচাকে প্রধান শিক্ষক করেন। এ বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি অভিযোগ দেই। বিষয়টি তদন্তাদিন। এখন হঠাৎ সে ১৮ই মার্চ চার পদে যারা আবেদন দিয়েছে ২৩মার্চ শনিবার পরীক্ষার প্রবেশ পত্র ইস্যু করেন। যাহা শিক্ষক ও কর্মচারী নীতিমালা বহির্ভূত। পরে আমি আদালতে সরনাপন্ন হলে আদালত ওই নিয়োগের স্থগিতাদেশ দেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আহমেদ উল্যাহ সবুজের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনোতো নিয়োগ পরীক্ষাই হয়নি তাহলে কিভাবে বুজলেন আমি আত্মীয় স্বজন নিয়োগ দিচ্ছি। আর আদালতের স্থগিতাদেশের বিষয়ে তিনি জানেন না।