রবিবার ● ২৮ এপ্রিল ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে ২ সাংবাদিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
কমলনগরে ২ সাংবাদিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : ইয়াবা সেবন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার এবং নিউজ করার অপরাধে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার দুই সাংবাদিকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করছেন এক ইউপি সদস্য।
এতে এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রোবার (২৮ এপ্রিল) মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
মামলার বাদী ওমর ফারুক মুন্সি উপজেলার চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং একই এলাকার মৃত ছিদ্দিক উল্লাহ মুন্সির ছেলে। আসামীরা হলেন, দৈনিক আজকের পত্রিকার কমলনগর উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ ইব্রাহীম, দৈনিক গণমুক্তি পত্রিকার কমলনগর উপজেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ শোরাফ উদ্দিন স্বপন, কমলনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও চর মার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুকবুল আহম্মদ বকুল, চর মার্টিন এলাকার বাসিন্দা ওমান প্রবাসী জহিরুল ইসলাম, প্রবাসী নিজাম উদ্দিন লিটন এবং স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী রাজিব হোসেন।
জানা যায়, গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে স্থানীয় ওই ইউপি সদস্যের মাদকসেবনের একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা গেছে ইউপি সদস্য খালি গায়ে লুঙ্গি পরে মুখে কলমের মতো কিছু একটা দিয়ে নিচে দিকে তাকিয়ে সাদা কি যেন মুখে টানছেন। তার পাশে একটি টেবিলে সিগারেটের প্যাকেট, ছাই রাখারপাত্র, কোমলপানীয় স্পীডের বোতল পড়ে রয়েছে। পিছনে আরেকটি চেয়ার খালি পড়ে আছে। জনপ্রতিনিধির ছবিটি প্রকাশ্যে আসার পর স্থানীয়দের মধ্যে সমালোচনার শুরু হয়েছিল।
পরে ২৪ মার্চ তারিখে দৈনিক দেশ রুপান্তর পত্রিকায় “ইউপি সদস্যের ইয়াবা সেবনের ছবি ভাইরাল” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রথম প্রকাশিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দৈনিক প্রথম আলো, মানবজমিন, কালেরকন্ঠ, আজকের পত্রিকা, সময়টিভিসহ দেশের অন্তত অর্ধশত প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক্স ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হয়।
দৈনিক দেশ রুপান্তর পত্রিকার প্রতিনিধির নিকট ওমর ফারুক মুন্সি জানিয়েছিলেন, ভাইরাল ছবিটি তার। বাসায় কিছু বন্ধু হঠাৎ একদিন ইয়াবা সেবনের জন্য আসেন। তখন জোর করে তাকে ইয়াবা সেবন করান বলে সে দাবি করেন।”
ঘটনাটি নিয়ে অনেকগুলো মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি ও গণমুক্তি পত্রিকার প্রতিনিধির বিরুদ্ধে কেন মামলা হলো ? এসব বিষয় জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ওমর ফারুক মুন্সি বলেন, কমলনগরে সাংবাদিক পরিচয়ে মো. ইব্রাহিম ভোটে হেরে যাওয়া আমার প্রতিপক্ষের আত্মীয়। তাই যে কোন বিষয়ে সে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে আমার পেছনে লেগে রয়েছে। আমি আমার সম্মান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে মামলা করছি। আর শোরাফ উদ্দিন স্বপন সাংবাদিক কিনা আমি জানি না।যারা যারা তাদের ফেসবুক আইডি থেকে এডিট করা ছবি প্রচার করেছে আমি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি।
তবে আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মোঃ ইব্রাহীম জানান, ইউপি সদস্যের ইয়াবা সেবনের ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় হয়। ঘটনার পরপরই দেশ রুপান্তর পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে আজকের পত্রিকাসহ অন্যান্য মিডিয়াও সংবাদটি প্রকাশিত হয়। কিন্ত এখন জানতে পারলাম, আজকের পত্রিকায় আমার পাঠানো সংবাদটি প্রকাশের পর আমার ফেসবুকে শেয়ারের অপরাধে আমিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গত ৩১ মার্চ তারিখে চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ইউপি সদস্য ওমর ফারুক মুন্সি। এ মামলাটি পুরোপুরি হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমরাও তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া চেষ্টা করছি।
এদিকে ওই ইউপি সদস্যের ইয়াবা সেবনের ছবি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের পর গত ১ এপ্রিল তারিখে স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এলাকায় মাদক ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধে ইউপি সদস্যকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছিল মানববন্ধনে। তবে ঘটনার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
স্থানীয় এলাকাবাসীর কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মধ্য চর মার্টিন গ্রামের প্রয়াত ছিদ্দিক উল্লাহ মুনিসর ছেলে ওমর ফারুক মুন্সী ছাত্র জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পরে যুবদলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা হন। ২০১৪ সালের পর থেকে তার বিরুদ্ধে নানা অপরাধে গাছকাটাসহ একাধিক মামলা হয়। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জ বাজারে দুটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।২০১৯ সালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি মামলায় তাকে গ্রেফতার করে। জামিনে বের হওয়ার পর এসব মামলা থেকে বাঁচতে একজন যুবলীগ নেতার হাতধরে তিনি যুবদল থেকে লাফ দিয়ে যুবলীগে আসেন। রাতারাতি তার পরিবর্তন হতে থাকে। তিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। কিন্ত যুবলীগ নেতার শেল্টারের কারণে তার সব অপরাধ ঢাকা পড়ে। ২০২১ সালে তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে ।