মঙ্গলবার ● ১৩ আগস্ট ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রামগতি-কমলনগরের বেশিরভাগ চেয়ারম্যানই আত্মগোপনে
রামগতি-কমলনগরের বেশিরভাগ চেয়ারম্যানই আত্মগোপনে
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
রামগতি-কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : গত ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পরে জনরোষের ভয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। এদের বেশীরভাগই স্ব স্ব উপজেলার আ’লীগের বড় বড় পদে রয়েছেন।
পৌরসভা,ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন ধরণের সনদসহ কিছু মৌলিক সেবা পেয়ে থাকেন।এসব সেবা বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা।
এসব চেয়ারম্যানগণ বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায়, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা ও মামলা দিয়ে ব্যপক হয়রানি করার কারণেই ভয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।
অন্যদিকে আ’লীগ করার কারণে হামলার ভয়ে আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অচিরেই পরিষদে বসবেন বলে জানান তারা।
জানা যায়, ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকার পতনের পর কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে শুধু চর কালকিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ছায়েফ উল্লাহ ছাড়া সব চেয়ারম্যান গাঢাকা দেন। মোবাইলেও পাওয়া যায়নি তাদেরকে। এতে বন্ধ হয়ে যায় সেসব ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম।
৫ দিন পর চর ফলকন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাঘা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মির্জা আশ্রাফুল জামান রাসেলের দেখা মিললেও পরিষদে আগের মতো থাকেননা। মাঝে মধ্যে বসেন বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধরা। ঘটনা আঁচ করতে পেরে আগের রাতেই ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোঃ নিজাম উদ্দিন পালিয়ে যান। আত্মগোপনে রয়েছেন পাটোয়ারীর হাট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এডঃ নুরুল আমিন রাজু, চর মার্টিন ইউপি চেয়ারম্যান ও চর মার্টিন ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ইউসুফ আলী।
এদিকে, একই অবস্থা বিরাজ করছে রামগতিতেও। জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও পৌরসভা মেয়র মেজবাহ্ উদ্দিন মেজু, চর রমিজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চেয়ারম্যান মুজাহিদুল ইসলাম দিদার, চর আব্দুল্লাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান কামাল হোসেন মঞ্জু, আলেকজান্ডার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান শামীম আব্বাস সুমন, চর পোড়াগাছা আওয়ামী লীগ নেতা মো. নুরুল আমিন, বড়খেরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চর গাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তওহিদুল ইসলাম সুমন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ ও চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধি গা ঢাকা দেওয়ায় পরিষদের কাজ বন্ধ হয়ে পড়ছে।
বেশকিছু ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ারম্যানদের অফিসে তালা ঝুলছে। অনেক সেবাপ্রত্যাশী গুরুত্বপূর্ণ নথিতে জনপ্রতিনিধির স্বাক্ষর নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। তাদের কেউ ওয়ারিশ সনদ আবার কেউ জন্ম সনদের জন্য এসেছিলেন। তবে চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় কেউ এসব নিতে পারছেন না।
চরমার্টিন ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্যানেল চেয়ারম্যান আবু মিয়া জানান, তার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী মিয়া ইউনিয়ন পরিষদে তালা দিয়ে পালিয়ে গেছেন। পরিষদ তালবন্ধ থাকায় আমি প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও পরিষদের কার্যক্রম করতে পারছিনা।
পাটোয়ারীর হাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এডঃ নুরুল আমিন রাজু জানান, পরিষদে এবং তার গ্রামের বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর করে তালা মেরে দিয়েছে বিএনপির নেতারা।
তার বসতঘরকে বিএনপি’র স্থানীয় কার্যালয় বানাবে বলে তালা মেরে রেখেছে। প্রাণনাশের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরিষদে বসবেন বলে জানান তিনি।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, ইউনিয়ন পরিষদে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক হলে সকলে আসবেন।