সোমবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষকদের কর্ম বিরতি
কমলনগরে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষকদের কর্ম বিরতি
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর(লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ক্লাস বর্জন করে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টা থেকে শিক্ষকরা কর্ম বিরতিতে অংশ নেয়। বিদ্যালয়টিতে চলতি বছর ১৩শ শিক্ষার্থী এবং ১৩ জন শিক্ষক রয়েছেন।
এছাড়া বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক শাখার পাশাপাশি, কারিগরি ও কলেজ শাখা রয়েছে।
এই ঘটনায় বিদ্যালয়ে এসেও শিক্ষকদের পাঠদান না পাওয়ায় প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে কর্মবিরতি পালন করছেন। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের বারান্দায় হাটাহাটি করছে ও শ্রেনীকক্ষে বসে গল্প,আড্ডায় মেতে হৈচৈ করতে দেখা গেছে। এ সময় পাঠদান না হওয়ায় দশম শ্রেনীর কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন সমস্যার কারণে ক্লাস হচ্ছেনা,আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।
সহকারী শিক্ষক বংশীধারী ভৌমিক জানান, বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর স্কুল হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সামান্য প্রাতিষ্ঠানিক বেতন, নানা ভাতা এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা বকেয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর দিচ্ছে না।
শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষককের উপস্থিতিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ এনে বলেন, ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়ের সকল প্রকার আয়-ব্যয় তিনি নিজের ইচ্ছে মতো ব্যবহার করছেন। চলতি সময় পর্যন্ত আয় ব্যয়ের কোন প্রকার হিসেব কাউকে প্রদান করছেন না।
বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের থেকে ৬ষ্ঠ, ৮ম এবং ৯ম শ্রেনীর রেজিষ্ট্রেশন, এসএসসির ফরম পূরণ, ছাড়পত্র ও প্রশংসাপত্র ফি বাবত অতিরিক্ত বিপুল অর্থ গ্রহন করা হয়। যার কোন ধরনের সঠিক হিসেব নেই। এছাড়া সারা বছর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যখন তখন শিক্ষার্থী ভর্তি ও পুনঃ ভর্তি করা হয়। তাতে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপে শ্রেনী কক্ষে নিয়মিত পাঠদান সম্ভব হয় না।
তিনি আরো বলেন,শিক্ষকদের কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না করে ২০২২ সাল থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর টিউশন ফি দ্বিগুনের বেশি বৃদ্ধি করেছেন। এসময় খন্ডাকালীন ৮ জন শিক্ষককে কোন কারণ ছাড়া চাকুরিচ্যুত করেছেন। বিদ্যালয়টিতে কোন প্রস্তুতি ছাড়াই নিজের ইচ্ছে মতো কলেজ শাখায় উন্নতি করেছেন।
এতে দীর্ঘদিন যাবত শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন-ভাতা বকেয়া, শিক্ষকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সংগ্রহ করে নিজে নিকট রেখেছেন এবং বিভিন্ন ভাতা বন্ধ রেখেছেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, আমাদের এসব অভিযোগ আমরা বিগত সময়ে বারবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্ত কেউই আমাদের কথা শুনেনি। বছরের পর বছর নিজের ইচ্ছে মতো গোপন ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বহু অভিভাবক সদস্য ছিল যারা নিজেদের নাম পর্যন্ত লিখতে পারেন না। তারা স্কুলের সমস্যা বুঝবে কিভাবে?
তাই আজ বাধ্য হয়ে কর্মবিরতি করছি। আমরা বিদ্যালয়টিকে বিদ্যালয়ের নিয়মে চলার জন্য কতৃর্পক্ষের নিকট একটা বার্তা দিতে চাই।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক কামাল উদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামীকাল শিক্ষকদের সাথে বসে সমাধান করা হবে। এ বিষয়ে সংবাদ না করতে তিনি অনুরোধ জানান।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টি সদ্য সভাপতি ও কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বিষয়টি শোনার পরপরই আমি আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে শিক্ষকদের নিয়ে বসার জন্য বৈঠক আহবান করেছি।