বুধবার ● ২ অক্টোবর ২০২৪
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে প্রধান শিক্ষক ৯ম ও সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেডের দাবীতে মানববন্ধন
কমলনগরে প্রধান শিক্ষক ৯ম ও সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেডের দাবীতে মানববন্ধন
কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, নিউজ এ্যাডভান্ড -কমলনগর
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (বুধবার)কমলনগর উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের উপস্থিতিতে এ কর্মসূচী পালিত হয়।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষকগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাসের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারক লিপি পেশ করেন।
উল্লেখ্য,দেশব্যাপী ‘বৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ’ ; বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও সহকারী শিক্ষক ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন ও আলোচনা সভার ধারাবাহিকতায় কমলনগর উপজেলার প্রাথমিকের সহকারী ও প্রধান শিক্ষকগণ সহকারীদের যোগ্যতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে অনতিবিলম্বে ১০ম গ্রেড প্রদান ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে উন্নীত করার একদফা দাবী জানান।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ও বৈষম্য নিরসন উপজেলা কমিটির আহবায়ক আবদুর রহমান সেলিম (প্রধান শিক্ষক) উপজেলা সভাপতি কামরুল হাসান(প্রধান শিক্ষক),সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন (প্রধান শিক্ষক), নির্বাহী সভাপতি নুরুল আমিন (প্রধান শিক্ষক), বৈষম্য নিরসন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মাকছুদুর রহমান(প্রধান শিক্ষক),রেহানা জামান (প্রধান শিক্ষক) বৈষম্য নিরসন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ ইছমাইল হোসেন (প্রধান শিক্ষক)উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্য নিরসন উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ (সহকারী শিক্ষক) যুগ্ম সম্পাদক নুরুজ্জামান (সহকারী শিক্ষক), সমিতির অন্যতম নেতা সহকারী শিক্ষক বীরেশ্বর চন্দ্র,নীলিমা আরজু,রিক্তা রানী,ইবরাহীম খলিল,শাহজাহান, মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন,আমির হোসেন প্রমুখ।
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকগণ বলেন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সমযোগ্যতায় সরকারী চাকুরীজীবিগণ ১০ম গ্রেড পেয়ে আসলেও প্রাথমিকের সহকারীদের নিয়োগ যোগ্যতা এন্ট্রি লেভেল স্নাতক দ্বিতীয় বিভাগসহ চাকুরী লাভের পরে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক খামখেয়ালীপনায় চরমভাবে বঞ্চনাও বৈষম্যের সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাতি গড়ার কারিগর সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম বেতন গ্রেড প্রদান করা হয়। বিগত ৪ বছর ধরে দাবী দাওয়া ও আনাদোলনের মুখে ইতোমধ্যে শিক্ষকদের বঞ্চনার বিষয় আঁচ করতে পেরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে উন্নীত করে ১২তম করার প্রস্তাবনা পেশ করলে সারাদেশের সহকারী শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হয়ে একযোগে সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন এবং অন্যায্য প্রস্তাবনা তৈরীতে জড়িতদের অপসারণ দাবী করে এবং অনতিবিলম্বে চরম অন্যায্য ও বৈষম্য নিরসন করে ন্যায্যতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সহকারীদের প্রকৃত অধিকার প্রতিষ্ঠা,যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিতকরণে ১০ম গ্রেড প্রদানের জোরালো দাবী জানান।
শিক্ষকগণ তাঁদের বক্তব্য স্পষ্টই বলেন, স্নাতক সমযোগ্যতায় পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব,মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষক, পিটিআই(পরিক্ষণ বিদ্যালয়)’র সহকারী শিক্ষক, এইচএসসি পাশসহ কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের কৃষি উপ সহকারী,এসএসসি পাশসহ নার্সি ডিপ্লোমাধারী নার্সগণ,বিভিন্ন দপ্তরের অফিস সহকারি (করণিকগণ) ১০ম গ্রেড পেয়ে আসছেন।অথচ সমযোগ্যতায় জাতি গড়ার প্রধান কারিগর,শিক্ষার প্রথম সোপান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকগণ ১৩তম গ্রেডে বেতন পান যা জাতি হিসেবে সকলের জন্যই লজ্জাজনক। অপরদিকে প্রধান শিক্ষকগণের মর্যাদা বৃদ্ধিতে তৎকালীন সরকার ২০১৪ সালে ১০ম গ্রেড ঘোষনা করলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সে সিদ্ধান্ত থমকে যায়।প্রধান শিক্ষকরা সেই প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নের জন্য হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করলে তাঁদেরকে দ্রুততার সঙ্গে ১০ম গ্রেড ও গেজেটেড কর্মকর্তা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দিলেও কর্তৃপক্ষ পুনরায় রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আপীল বিভাগে আপীল দায়ের করেন, আপীলের রায়েও প্রধানের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে দেয়া রায় বহাল রাখলেও সরকার কালক্ষেপণের জন্য রিভিউ দাখিল করে রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে।প্রাথমিকের প্রধানগণ ২০১৪’ সালের দাবীকৃত ১০ম’র দাবী থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে ২০২৪’সালে সময়োপযোগী ৯ম গ্রেড প্রদানের একদফা দাবীতে সোচ্চার হন।দেশব্যাপী সহকারী শিক্ষকদের ১০ম ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডসহ উভয় পদ থেকে শতভাগ পদোন্নতি দানের জন্য একদফা দাবীতে অটল রয়েছেন দেশের ৫ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক। ইতিমধ্যে সারাদেশের সবকটি উপজেলায় মানববন্ধন,সংবাদ সম্মেলন করাসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, সচিব ও মহাপরিচালকের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে তাঁদের ৯ম/১০ম’র একদফা দাবীর যৌক্তিকতা তুলে ধরে জানিয়ে আবেদন জানিয়েছেন।সে আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ২৪সেপ্টেম্বর তারিখে মাসিক সমন্বয় সভায় সহকারীদের ১০ম ও প্রধান শিক্ষক ৯ম গ্রেডের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে প্রাথমিকের জন্য উচ্চ পর্যায়ে গঠিত কনসাল্টেশান কমিটিতে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্য একমাত্র প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। আর প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা ও আর্থিক নিশ্চয়তা।সামাজিক মর্যাদা আর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চায়নে সহকারী ১০ম ও প্রধান শিক্ষকের ৯ম গ্রেডের বিকল্প নাই।শিক্ষার ভীত সুদৃঢ়করণে প্রাথমিক শিক্ষকদের একদফা দাবী মেনে নেয়া সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের জন্য অত্যাবশ্যক।