শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১
---

Newsadvance24
শনিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » দখলদারদের তালিকা হলেও নেই অগ্রগতি, কমলনগরে দখল দূষণে মৃত জারিরদোনা খাল
প্রথম পাতা » জাতীয় » দখলদারদের তালিকা হলেও নেই অগ্রগতি, কমলনগরে দখল দূষণে মৃত জারিরদোনা খাল
২২ বার পঠিত
শনিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

দখলদারদের তালিকা হলেও নেই অগ্রগতি, কমলনগরে দখল দূষণে মৃত জারিরদোনা খাল

ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স

---

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট বাজারে অবস্থিত জারিরদোনা খালের সংযোগ খালটি দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বহুতল ভবন এবং দোকানপাট নির্মাণ করায় সেটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছর আগে ৮০জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা হলেও নেই কোন অগ্রগতি। প্রশাসনের কর্তাব্যাক্তিদের ম্যানেজ করে এ খাল দখল করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের মতে, যে খাল দিয়ে এক সময়ে পণ্যবাহী নৌকা চলতো, সে খাল এখন সংকুচিত হয়ে নালায় রূপ নিয়েছে। খালের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উপজেলার হাজিরহাট, চরফলকন, চর জাঙ্গিলিয়া, জাজিরাসহ আশপাশের বাসিন্দারা অবৈধ দখলদার, হাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, এক সময় মেঘনা নদীর জোয়ারের পানি এ খাল দিয়ে প্রবেশ করতো এবং অতিবৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নেমে যেত। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খাল সংলগ্ন ফসলি জমিতে খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করা হতো। আর জোয়ারের সঙ্গে নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খালে এসে পড়তো। কিন্তু খালের উত্তর অংশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রশস্ত হলেও এখন খালটি কোনো কাজেই আসছে না। এলাকার বৃষ্টির পানি এখন আর এ খাল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ নেই, আর খাল দিয়ে নদী থেকে পানি আসারও সুযোগ নেই।

তাদের অভিযোগ, গত ১৫-২০ বছর ধরে হাজিরহাট বাজারে থাকা খালপাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় নদীর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাজারের অংশের খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায়, কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার সীমান্ত এলাকা আলেকজান্ডারের বালুরচর এলাকার জারিরদোনা খাল সংলগ্ন বেড়িবাঁধের ওপর থাকা স্লুইস গেটের উত্তর অংশ থেকে সংযোগ খালটি শুরু। এটি উত্তরমুখী হয়ে খায়েরহাটে ইউনিয়ন দিয়ে হাজিরহাট বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে বাজারের উত্তর দিক থেকে কয়েক কিলোমিটার গিয়ে পূর্ব দিকে উপজেলা পরিষদের পাশে গিয়ে শেষ হয়। খালের উত্তর অংশ এবং দক্ষিণ অংশে পূর্বের অবস্থানে থাকলেও হাজিরহাট বাজার সংলগ্ন খালের মাঝখানের অংশটির তেমন কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে হাজিরহাট বাজারের অংশের এখালে ১১টি বহুতল ভবন এবং ৬৯টি আধাপাকা ও টিনশেড ঘর রয়েছে।

যাতায়াতের জন্য খালের ওপর অপরিকল্পিতভাবে ছোট ছোট বেশ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণ করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ভবনে থাকা ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান ও ভবনের বাসিন্দাদের ব্যবহৃত বর্জ্য-আবর্জনা এসে পড়ছে খালটিতে।

---

হাজিরহাট বাজার পরিচালনা কমিটির প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মন্জুর বলেন, বাজারের যত ময়লা আর্বজনা আছে, সবগুলো এ খালে ফেলা হচ্ছে। এতে খাল দূষণ হচ্ছে, অন্যদিকে ময়লা ফেলে খালটি ভরাট করা হচ্ছে। আস্তে আস্তে খালপাড় ভরাট হয়ে গেলে সেখানে অবৈধভাবে দোকানপাট তোলা হয়। এছাড়া বাজারের ওপর বেশ কয়েকটি দ্বিতল ও তিনতলা ভবনের বেশিরভাগ অংশ নির্মাণ করা হয়েছে খালের ওপর। বছরের পর বছর ধরে খাল দখল হচ্ছে, কিন্তু কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।

হাজিরহাট বাজারের ইফাজ ফার্মেসীর মালিক স্থানীয় সাংবাদিক শরীফুল ইসলাম বলেন, খালে ময়লা ফেলার কারণে মারাত্মক দূষণের কবলে পড়েছে। খালে থাকা ময়লা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোথাও আবার পোকা কিলবিল করছে। ফলে স্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকির মধ্যে আছে এলাকার লোকজন।

এক সময়ের বাজারের ব্যবসায়ি স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ হাজী মোকাদ্দেস মিয়া বলেন, স্বাধীনতার অন্তত ১০ বছর পরেও এ খাল দিয়ে পণ্যবাহী নৌকা চলাচল করতো। হাজিরহাট বাজারে সরকারি গুদাম ছিল। গুদামের মালামাল আসতো এ খাল দিয়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যে খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলতো, সে খাল এখন নেই বললেই চলে। নদীর জোয়ারের পানির স্রোত ছিল যে খাল দিয়ে, সেই খাল দিয়ে এখন বৃষ্টির পানিও গড়ায় না।

কমলনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো.ফয়েজ বলেন, খাল উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। বরং তাদের গাফিলতির কারণে দিন দিন অবৈধ দখলদাররা খালকে গিলে খাচ্ছে।

এ বিষয়ে কমলনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, হাজিরহাটে জারিরদোনা শাখা খালটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এ খালের ওপর থাকা অবৈধ ৮০ জন দখলদারদের একটি তালিকা সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে। অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া আছে। খুব শিগগিরই সেখানে অভিযান চালিয়ে খালটি দখলমুক্ত করার কথা জানান তিনি।

দৃশ্যমান এ খালটি বহুতল ভবন এবং স্থাপনার নিচে চাপা পড়ে গেছে। অবৈধ দখলদারদের থেকে এ খালটি উদ্ধার এবং সংস্কার করার কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি এলাকাবাসীর ।





আর্কাইভ