

রবিবার ● ২ মার্চ ২০২৫
প্রথম পাতা » জাতীয় » পতাকা উত্তোলন ও ঐতিহাসিকতা
পতাকা উত্তোলন ও ঐতিহাসিকতা
আ স ম আবদুর রব
১৯৭১ সালের ২ মার্চ স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের পূর্বে, বাঙালি কর্তৃক আরও একবার স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিলো। সেটা ছিলো- ১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ঘটনা। আপোসহীনতার প্রতিকৃৎ, সময়ের অসমসাহসী সন্তান, ভারতীয় উপমহাদেশের ঘরে ঘরে সংগ্রামের অগ্নিশিখা ছড়িয়ে দেয়ার মহানায়ক ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গের প্রতীক- নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু বাঙালি জাতির ইতিহাসে ‘স্বাধীনতার পতাকা’ উত্তোলনের প্রথম গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দেন।
ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন বাঙালির প্রাণ পুরুষ সংগ্রামী নায়ক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তী সুভাষ চন্দ্র বসু। ১৯৪৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্দামান নিকোবর দ্বীপের রাজধানী ‘পোর্ট ব্লেয়ারে’।
বাঙালি জাতির ইতিহাসের সংগ্রহশালায় পতাকা উত্তোলনের দু’টি ঘটনাই কেবলমাত্র সংরক্ষিত আছে। নেতাজি উত্তোলন করেছিলেন ঐতিহাসিক তিরঙ্গা পতাকা আর বাংলাদেশে উত্তোলিত হয়েছিল লাল সবুজের বৃত্তে সোনালী মানচিত্র খচিত পতাকা।
বাঙালির দীর্ঘ জাতিরাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া ও জাতীয় মুক্তির লড়াই-সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতিতে ৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়। বাঙালির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে। স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র যার মূর্তরূপ।
‘৭১- এর ২ মার্চ বাঙালির জাতিরাষ্ট্র নির্মাণের চূড়ান্ত আকাঙ্ক্ষার রূপ দেয়ার লক্ষ্যে মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে সিরাজুল আলম খানের পরিকল্পনায় এবং নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্তে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেছিলাম। পতাকা উত্তোলনের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, জগন্নাথ হল ও নীলক্ষেত এলাকা ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের- নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও আমিসহ আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র সমাবেশে হাজির হই তখন হাজার হাজার মানুষের মুখে একটাই ধ্বনি ভেসে উঠলো- উপরে উঠুন আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তখন আমরা বাধ্য হয়ে কলা ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের বারান্দায় উঠে সভার কার্যক্রম শুরু করি। এখানে দাঁড়িয়ে পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে ছাত্র জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। আমার অস্তিত্ব জুড়ে কী অনুভব-কী তাণ্ডব ছিলো তা কোনদিন প্রকাশ করতে পারিনি এবং এ আলোড়ন ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভবও নয়।
পতাকা উত্তোলনের ঘটনা মুক্তিকামী ছাত্র-যুব-জনতাকে স্বাধীনতার লক্ষ্যে কী রকম প্রচন্ডতায় আন্দোলিত করে পাগলপারা করে তুলেছিলো- তা বিএলএফ এর অন্যতম সদস্য, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন পেয়ারার একটি লেখা থেকে আংশিক উদ্ধৃত করছি-
“বটতলায় সমাবেশ। সভা শুরুর অনেক আগে থেকে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় বটতলা। ওদিকে গুরু নানকশাহি, গুরুদুয়ারা হয়ে ভিসির বাড়ির সামনে থেকে প্রোক্টর মোহর আলির বাসা ঘুরে কলাভবনের বারান্দা পর্যন্ত এক বিশাল জনসমুদ্র। এ অবস্থায় বটতলায় দাঁড়িয়ে পতাকা তুললে সেটা সবাই দেখতে পাবে না। অতএব তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত হলো আ স ম আবদুর রব বটতলা থেকে নয়, কলা ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিমের গাড়ি বারান্দার ছাদ থেকে পতাকা উত্তোলন করবেন। তা হলে সেটা বিশাল জন সমুদ্রের সকলের দৃষ্টিগোচর হবে। সে কথা মতো- রব, ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন, ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকি ও সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ কলাভবনের দোতালায় উঠে সেখান থেকে রেলিং টপকে গাড়ি বারান্দার ছাদে অবস্থান নিলেন।
পতাকা তখনো সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে। বেলা এগারোটার দিকে ছাত্রলীগ ঢাকা নগর শাখার সভাপতি শেখ জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্র লীগের জঙ্গি গ্রুপের কুড়ি পঁচিশ জনের একটি দল একটি ফ্লাগমাস্টের মাথায় পতাকাটি বেঁধে ‘জয় বাঙলা’ স্লোগান দিতে দিতে জহুরুল হক হল থেকে বটতলার জনসমুদ্রের দিকে আসতে থাকে। জহুরুল হক হলের গেট থেকে পতাকাবাহি দলটিকে দেখতে পেয়ে জনসভা যেন গণহিস্টিরিয়াগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সে এমন এক দৃশ্য যা কোন মানুষের পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। সেদিন যারা ঐ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেবল তারাই এর ভেতরের আগুন দেখেছিলেন, তার উত্তাপ অনুভব করেছিলেন। পঞ্চাশ বছর পর তার বিবরণ দেয়া অসম্ভব। যদি এক লাখ মানুষ থেকে থাকতেন তা হলে ঐ এক লাখের প্রত্যেকে ছিলেন অগ্নুৎপাতরত এক একটি জীবন্ত মানবাগ্নেয়গিরি। গগণবিদারী স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ পুরো এলাকা থর থর করে কাঁপছিল। আমাদের শরীরে তখন মিলিয়ন ভোল্ট বিদ্যুতের বিস্ফোরক উদ্দাম উম্মাদনৃত্য। জয় বাঙলা। তোমার দেশ আমার দেশ, বাঙলাদেশ বাঙলাদেশ। তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা। বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাঙলাদেশ স্বাধীন কর। তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব।
টগবগ করে ফুটতে থাকা সেই জনসমুদ্রের ফুটন্ত জলরাশি ভেদ করে জাহিদের বাহিনী এসে কলাভবনের গাড়ি বারান্দার নিচে থামলো। জাহিদ ফ্ল্যাগ মাস্টটি ছাদের উপর দাঁড়ানো আ স ম আব্দুর রবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। রব সেটি সমবেত জনতার সামনে তুলে ধরলেন। তখন চারদিকে কেবল স্লোগান, স্লোগান, স্লোগান। গলা ফাটানো, কান ফাটানো, আকাশ ফাটানো স্লোগান। কয়েক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল কলাভবনের প্রতিটি ইট, ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছ যেন মত্তজনতার অংশ হয়ে একযোগে ‘জয় বাঙলা’ ‘জয় বাঙলা’ ধ্বনিতে ফেটে পড়ছে। কয়েক মুহুর্তের জন্য প্রতিটি গাছের পাতা যেন আ স ম রবের হাতে ওড়ানো স্বাধীন বাঙলার এক একটি পতাকায় পরিণত হয়েছিল। ইতিহাস কখনো এসব দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি করে না “।
নেতাজি ভারতের পতাকা উত্তোলক। পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতার প্রশ্নে মানুষের অনমনীয় সংকল্প ও অদমনীয় আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাহসিকতাই ঐতিহাসিকতা। ভারত থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করার জন্য নেতাজি নিজের দেশ ত্যাগ করেছেন এবং ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠন করে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন।
আর আমরা স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করে নিজ দেশ ত্যাগ করে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি। আমাদের সংগ্রামের লক্ষ্য- স্বাধীনতা।
নেতাজি দেশমাতৃকার তরে ইহজীবন থেকে চিরতরে নিরুদ্দেশ হয়েছেন, আমরা স্বাধীনতা অর্জনের পর আজও স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরন্তর সংগ্রামে জড়িত আছি। নেতাজিই ছিলেন প্রথম ভারতীয়, যিনি দু’শো বছরের পরাধীনতার গ্লানি থেকে আংশিক মুক্তির স্বাদ দেন। ব্রিটিশের দখলে থাকা ভারতের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে প্রথম স্বাধীন বলে ঘোষণা করে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আন্দামানই ছিলো ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া প্রথম ভারতীয় অঞ্চল।
সে সময় অবশ্য ভারতীয় জাতীয় পতাকা আজকের মতো ছিল না। সময়ের সঙ্গে নানাভাবে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বদলেছে ভারতের জাতীয় পতাকা। ভগিনী নিবেদিতা পতাকা, লোটাস পতাকা, বার্লিন ফ্ল্যাগ, সর্বশেষ তেরঙ্গা পতাকা। ১৯৩১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের সভায় পতাকা চূড়ান্ত করা হয়। মহাত্মা গান্ধী ভারতের জাতীয় পতাকার অনুমোদন দিয়েছিলেন। আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নির্মিত হয়েছে স্বাধীনতার রূপকার সিরাজুল আলম খানের নির্দেশে ও অনুমোদনে।
উল্লেখ্য, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু যুদ্বের সময় ১৯৪৩ সালের অগাস্ট মাসে ঘোষণা করেন, বছর শেষের আগেই ভারতের মাটিতে উপস্থিত হবে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’। ১৯৪৩ সালের শেষের দিকে আজাদ হিন্দ সরকার জাপানিদের কাছ থেকে এই দ্বীপপুঞ্জের দখল নেয়। নেতাজি স্বয়ং ভারতের এই দ্বীপপুঞ্জে স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়ে এক বিশাল জনসভায় দেশকে বৃটিশ শাসনের কবল থেকে মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণার চার বছর পরই ভারতমাতা দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়।
আর ১৯৭১- এর ২ মার্চ, বাংলাদেশে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্নের পতাকা উত্তোলন করতে হয়েছিল। স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার জন্য রক্ত লাল পতাকা উত্তোলন করা- বিশ শতকের বিশ্ব রাজনীতিতে বিরল । একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বুকে আরেকটি রাষ্ট্রের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা অকল্পনীয় ঘটনা। পতাকা উত্তোলনের ৯ মাস পর পাকিস্তানি দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে বাংলাদেশ। ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন ছিল স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের প্রশ্নে চরম মাত্রার বিস্ফোরণ। পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক নাগপাশ ছিন্ন করে পাকিস্তানি আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাঙালি প্রতিরুদ্ধতা- চূড়ান্ত রূপ পায়। জাতীয় পতাকা হচ্ছে সার্বভৌমত্বের প্রতীক। ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন ছিলো ঔপনিবেশিক পাকিস্তান রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক মৃত্যুপরোয়ানা।
পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ‘অধীন’ এবং ‘অধীনস্থতার’ জোয়াল চূড়ান্তভাবে ছুঁড়ে ফেলে নতুন আখ্যান নির্মাণে জনগণ শামিল হতে শুরু করেছিল। পতাকা উত্তোলন কার্যত, সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের চেতনা সমৃদ্ধ করে একটি পরাধীন চেতনার দেয়ালে ফাটল ধরিয়ে দেয়। মানুষের মনে এ ধারনার জন্ম দেয় যে- পতাকা হচ্ছে স্বাধীনতার ঐতিহাসিক সত্তা। বাঙালির স্বপ্নপূরণের বয়ান হচ্ছে এই পতাকা উত্তোলন।
নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তৈরি হয়। ১৯৭০ সালে ৬ জুন সন্ধ্যায় ইকবাল হলের ১১৬ নম্বর কক্ষে- মনিরুল ইসলাম, শাহজাহান সিরাজ ও আমাকে ডেকে কাজী আরেফ নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পতাকা তৈরির কথা জানান। বাঙালি জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নির্মাণে বিপ্লবী পরিষদের সদস্যগণ অনেক আলোচনা করে পতাকার নকশা চূড়ান্ত করেন। পতাকা তৈরির পুরো কাজটি হয়েছিল খুবই গোপনে। কাজি আরেফ সহ ২২ সদস্য এ পতাকা তৈরীর কাজে অংশ নেন। পতাকা তৈরীর দায়িত্বপ্রাপ্তরা হলেন- মনিরুল ইসলাম, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কামরুল আলম খান খসরু, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, হাসানুল হক ইনু, স্বপন কুমার চৌধুরী, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস, রফিকুল ইসলাম লিটল কমরেড, আব্দুল্লাহ সানি, এনামুল হক, শিব নারায়ন দাস, নজরুল ইসলাম, শেখ সহিদুল ইসলাম, চিশতি শাহ হেলালুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মইনুল ইসলাম চৌধুরী আজাদ, গোলাম ফারুক, জিন্নাত আলী , শেখ মোহাম্মদ জাহিদ প্রমুখ।
পতাকা তৈরির পর সর্বশেষ পতাকাকে অনুমোদন দেন সিরাজুল আলম খান। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকার পরিকল্পনায়, উত্তোলনে, নির্মানে সব কিছুতেই নিউক্লিয়াস ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ জড়িত ছিলেন।
নেতাজির গায়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পোশাক, বীরোদীপ্ত চেহারা এবং তাঁর সেই ডাক - ‘চলো দিল্লি’ বা ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও- আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব’ এই ছবিটাই বাঙালির মনে আজও প্রকট হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে সূর্যের তীব্র আলোয় লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতার সমাবেশে গাঢ় সবুজের লাল বৃত্তে সোনালী মানচিত্র খচিত পতাকা, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে গ্রথিত আছে।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী শুধু পুরোগামী নেতাই ছিলেন না; তিনি স্বাধীনতার জন্য জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছেন। নেতাজির অনন্যসাধারণ ভূমিকা সমগ্র ভারতবাসী অকুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করছে।
‘৫২- এর প্রেরণার পর ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ ইশতেহার পাঠ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ- সমগ্র জাতিকে সংগ্রামী ও বিপ্লবী আগুনে পুড়িয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলিতে পৌঁছে দেয়। জনতার মাঝে রাষ্ট্রের অনিবার্যতা স্পষ্ট হয়, জাতির অন্তরে বিপুল শক্তির জন্ম হয়।
১৯৭১- এর মুক্তিসংগ্রামে নেতাজির সংগ্রামী চেতনা যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা, অন্তহীন সাহস ও শক্তি। বাংলার পলিমাটিতে অগণিত বীরের জন্ম। যাঁরা আত্মদান ও নেতৃত্ব দিয়ে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে ইতিহাস পুননির্মাণ করেছেন; তাঁদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক