শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
---

Newsadvance24
শুক্রবার ● ২৮ মে ২০২১
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি? ঝুঁকিতে কারা? সুরক্ষার উপায়?
প্রথম পাতা » এক্সক্লুসিভ » ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি? ঝুঁকিতে কারা? সুরক্ষার উপায়?
১৩৬৯ বার পঠিত
শুক্রবার ● ২৮ মে ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি? ঝুঁকিতে কারা? সুরক্ষার উপায়?

ডাঃ শাহরিয়ার রোজেন, ডাঃ তাসরিন সুলতানা

 

---

সম্প্রতি ভারতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারী ঘোষণা করায় এবং বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকে ভাবতে শুরু করেছেন এই রোগ বাংলাদেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অযাচিত আতঙ্ক দূর করার জন্য জনগণের মাঝে বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়া অত্যন্ত জরুরি।ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছোঁয়াচে নয়, একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায় না। এটি কোনো নতুন অসুখ নয়। আমাদের পরিবেশে এই ছত্রাক আগেও ছিল - এটা ভারত থেকে আসে নি । সুস্থ সবল মানুষে এর জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হয় না। দেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে গেলেই কেবল জীবাণুটি দ্বারা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরী হয়। এসব কারণে এ রোগ বাংলাদেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

 

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কি?

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হল মিউকরমাইকোসিস বা এক ধরনের ছত্রাক জনিত বিরল রোগ যা সাধারণত মাটি, পচনশীল আবর্জনা, নোংরা পানি থেকে বাতাসের মাধ্যমে অথবা আমাদের শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান, পুড়ে যাওয়া অংশ ,নাক চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সাধারনত সাইনাস, চোখ,নাক, চোয়ালে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দ্বারা সংক্রমণ হতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ইনফেকশন ফুসফুসে এমনকি ব্রেইনেও ছড়াতে পারে। করোনা মহামারী ছড়ানোর আগেও প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে একজনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখা যেত ।

ঝুঁকিতে যারাঃ

১. করোনায় আক্রান্ত বা করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তি যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত কম, বিশেষত যাদের স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করতে হয়েছে অথবা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে।

২.গবেষণায় দেখা গেছে ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত দুই-তৃতীয়াংশ বা ৬৬% রোগীই অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং দুই তৃতীয়াংশ রোগী স্টেরয়েড নিয়েছেন এবং আক্রান্তদের অধিকাংশ রোগীই পুরুষ ।

৩.ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগীরা অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় কম যেমন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী

৪. দীর্ঘদিন কোভিড আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ছিলেন বা ভেন্টিলেশনে ছিলেন, অক্সিজেন, হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করেছেন।

করোনায় আক্রান্তদের ঝুঁকি বেশি কেন?

করোনায় আক্রান্ত ও করোনা থেকে সুস্থ কিছু মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, বিশেষত যাদের স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করতে হয়েছে অথবা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস আছে । স্টেরয়েড-এর একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হলো এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আবার ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে রক্তে ব্লাড সুগার বেড়ে যায় - ফলে ছত্রাক সংক্রমণের অনুকূল পরিবেশ তৈরী হয়। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পরলে “ব্ল্যাক ফাঙ্গাস” দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরী হয়।

উপসর্গ:১. জ্বর, মাথাব্যথা। মাথার যে কোন একপাশে বা সাইনাসের ব্যথা হওয়া।

২. নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ,নাক থেকে রক্ত পড়া, নাকের চামড়ার পাশে কালো কালো ছোপ দাগ দেখা যাওয়া

৩. চোখ ব্যথা হওয়া এবং চোখ ফুলে যাওয়া । চোখের পাতা ঝুলে পড়া অনেকের ক্ষেত্রে চোখের দৃষ্টি ও চলে যায়।

৪. চোয়াল নাড়াতে কষ্ট হওয়া।

৫. কাশি বা বমির সাথে রক্ত যাওয়া।

৬. সংক্রমণ বাড়লে বুক ব্যাথা, শ্বাসকষ্টও দেখা দিতে পারে ।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে সুরক্ষার উপায়:

ব্ল্যাক্স ফাঙ্গাসের সংক্রমণ যাদের মাঝে দেখা যাচ্ছে তাদের বড় একটা অংশ করোনা রোগী। ভারতে ব্ল্যাক্স ফাঙ্গাসের সংক্রমণ এত বেশি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ করোনার উচ্চ সংক্রমণ। একারণে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ব্ল্যাক্স ফাঙ্গাস বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে না।এই ফাঙ্গাস সংক্রমণ এড়াতে করোনা রোগীদের সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড ডোজ নিশ্চিত করতে হবে এবং করোনার ভয়ে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ গ্রহণ করা যাবে না। অক্সিজেন থেরাপির সময় হিউমিডাইফায়ার পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।একথা সত্যি যে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার প্রায় শতকরা ৫৪ ভাগ। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, সুস্থ সবল মানুষে এর জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ হয় না। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের বিশেষভাবে সতর্কতা মেনে চলতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে ব্লাড সুগার লেভেল পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। উচ্চঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের নির্মাণ বা খননকাজের জায়গা যেখান থেকে ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ছে এমন জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে, খালি পায়ে ঘোরাফেরা করা যাবে না, মোজা ছাড়া জুতা পরা যাবে না, ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে দেয়ালের স্পর্শে যাওয়া পরিহার করতে হবে । সব সময় পরিষ্কার মাস্ক পরতে হবে, একই মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যাবে না। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন সি, ডি, ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।পাশাপাশি সকলকে মনে রাখতে হবে, ডাক্তারের পরামর্শ মারা ওষুধ (স্টেরয়েড) সেবনে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ পরিহার করতে হবে।আশার কথা হচ্ছে এ রোগ ছোঁয়াচে নয় অর্থাৎ একজন থেকে আরেকজনের মাধ্যমে অথবা প্রাণী থেকে মানুষের মাধ্যমে এই রোগটি ছড়াতে পারে না। “ব্ল্যাক ফাঙ্গাস” রোগটি করোনার মতো সংক্রামক নয়, তাই আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।লেখক:ডাঃ শাহরিয়ার রোজেন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক, কানাডা;ডাঃ তাসরিন সুলতানা, রিসার্চ এবং পলিসি এনালিস্ট, সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন, কানাডা।

তথ্য সূত্র :-মানবজমিন 





আর্কাইভ