মঙ্গলবার ● ২৯ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে পিআইও’র ঘুষের ১৬ লাখ টাকা লাপাত্তা, চার কর্মচারী আটক
কমলনগরে পিআইও’র ঘুষের ১৬ লাখ টাকা লাপাত্তা, চার কর্মচারী আটক
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াদ হোসেনের কার্যালয় থেকে ১৬ লাখ টাকা লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনাই একই কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুল বাকেরসহ ৪ কর্মচারীকে দফায় দফায় থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জানা যায়, সোমবার সকালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিসের ১৬লাখ টাকা খোয়া গেছে বলে প্রচার চালায় পিআইও মো. রিয়াদ হোসেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বাকেরের উপজেলার বাসভবনে তল্লাশী চালায় পিআইও রিয়াদ হোসেন ও তার আরেক সহকারী মেহেদী। এ সময় তার বাসায় তল্লাশীর নামে আসবাবপত্র ভাঙচুর ও ওলট পালট করে তছনছ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার। তার স্বামী (বাকের) এর বিরুদ্ধে পিআইও রিয়াদের এটা সাজানো নাটক এবং তার স্বামীকে ফাসানো জন্য এই নাটক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বাসায় টাকার কোন হদিস না পেয়ে উপজেলা মসজিদে ঢুকে কোরান শরীফ ছুঁয়ে শপথ করানো হয়। কিন্তু তাতেও কোন লাভ না হওয়ায় সোমবার রাত ৯টার দিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাকের, মেহেদীসহ চারজনকে থানা হেফাজতে দেয় পিআইও রিয়াদ। পুলিশ রাতে জিজ্ঞাসাবদে কোন ক্লু উৎঘাটন করতে না পেরে তাদের ছেড়ে দেয়। পিআইও থানায় কোন লিখিত অভিযোগ না দিলেও মঙ্গলবার সকালে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার থানা হেফাজতে আনা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা থানা হেফাজতে আটক রয়েছেন।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন ঠিকাদারের অভিযোগ, পিআইও রিয়াদ প্রত্যেকটি কাজেই ঘুষ বানিজ্য করে। ঘুষ ছাড়া তিনি কোন ফাইল বা বিলের চেকে সই করেন না। সম্প্রতি কয়েকটি কাজের বিলের চেকে সই করার জন্য তাদের কাছ থেকে তিনি ১ থেকে ৩ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন।
উপজেলা কার্যালয়ের কয়েকজনের ভাষ্যমতে, পিআইও’র কার্যালয়ে নগদ টাকা থাকার কথা নয়। তিনি ঠিকাদারদের টাকা চেক অথবা প্রে-অর্ডার এর মাধ্যমে বিল দেয়ার কথা। তাহলে নগদ টাকা কেন আসবে..? তাও এত টাকা! এ টাকা গুলোর উৎস কি..?
তারা আরও বলেন, পিআইও রিয়াদ দীর্ঘদিন থেকে ঘুষ বানিজ্য করে আসছেন। তিনি এরপূর্বে যত জায়গায় কর্মরত ছিলেন, সবখানেই ঘুষ বানিজ্য করেছেন।
জানা গেছে, রিয়াদ হোসেন রামগতি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হলেও কমলনগর উপজেলার শূন্যপদে তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে আবদুল বাকেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তিনমাস পূর্বে যোগদান করলেও আমাকে কোন ধরণের কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। অফিসের সকল কাজ মেহেদী করে। আমরা সরকারি কোয়ার্টারে থাকি। পিআইও নিজে এসে টাকা খোঁজার নামে তল্লাশি চালিয়ে আমার বাসার সকল আসবাবপত্র ওলট-পালট করে দিয়ে গেছে। আমি কোন দোষ করিনি। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে জানতে পিআইও রিয়াদ হোসেনের মুঠোফোনে বারবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসলেহ উদ্দিন জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় চারজনকে ডাকা হয়েছে। তবে পিআইও এখনো কোন নির্দিষ্ট অভিযোগ দেননি এবং টাকারও সুনির্দিষ্ট কোন অংক বলেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়া পর্যন্ত আমি টাকার বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে তিনি আরও জানান।
জানতে চাইলে কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, চারজনকে থানায় ডাকার কথা শুনেছি। পিআইও অফিসের কিছু টাকারর ঝামেলার কারণে তাদের থানায় আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া বিস্তারিত তেমন কিছু তিনি জানেন না।