শিরোনাম:
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ন ১৪৩১
---

Newsadvance24
শনিবার ● ৭ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রায়পুরে ভালো নেই চাঁই ব্যবসায়ীরা, হতাশায় ফিরছেন বাড়ি
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রায়পুরে ভালো নেই চাঁই ব্যবসায়ীরা, হতাশায় ফিরছেন বাড়ি
৯৮০ বার পঠিত
শনিবার ● ৭ আগস্ট ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

রায়পুরে ভালো নেই চাঁই ব্যবসায়ীরা, হতাশায় ফিরছেন বাড়ি

প্রদীপ কুমার রায়, নিউজ এ্যাডভান্স

 

---

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর ) : এ বছর খাল, বিল, নদী-নালায় পানি কম থাকায় চাঁইয়ের চাহিদাও কম। আগের তুলনায় মন্দাভাব ব্যবসায়। চাহিদা কম থাকায় বেচা হচ্ছে কম। তাই ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন মৌসুমী চাঁইয়ের ব্যবসায়ী ও কারিগররা। চাঁই পেতে মাছ কম পাওয়া এবং চায়না রিং চাইয়ের দাপটে টিকতে না পারাকেই  এজন্য তারা দায়ী করেছেন।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার হাজিমারা, চর ইন্দুরিয়া, মোল্লারহাট, খাসেরহাট ও হায়দরগঞ্জ এলাকা ঘুরে পাওয়া গেছে এ চিত্র। বাঁশের শলা দিয়ে তৈরি এক ধরনের মাছের ফাঁদকে মাছ ধরার চাঁই বলে। মুলি ও মোড়ল দুই ধরনের বাঁশ দিয়েই এ চাঁই বানানো হয়। অন্যদিকে লোহার রিং ও চায়না সুতা দিয়ে তৈরী জাল দিয়ে বানানো হয় রিং চাই।

হাজীমারা বাজারে প্রায় ১৫ বছর ধরে চাঁইয়ের ব্যবসা করছেন বিধান চন্দ্র সরকার, সমির চন্দ্র সরকার, রণজিত বিশ্বাস, তপন সরকার ও নিখিল বৈদ্য। তাঁদের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায়। প্রতি বছরের জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে এখানে আসেন। থাকেন দুই থেকে আড়াই মাস। চলে যান শ্রাবন মাসের শেষের দিকে বা ভাদ্রের প্রথমে। এদের মধ্যে রণজিত বিশ্বাস ও তপন সরকার মহাজন আর অন্যরা তাদের কারিগর হিসেবে মজুরী ভিত্তিতে কাজ করেন।

রণজিত বিশ্বাস ও তপন সরকার বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে এ এলাকায় এসে ব্যবসা করছি। কখনোই এতোটা মন্দাভাব যায়নি। এ বছর চাঁইয়ের বেচা অনেক কম। মাছ কম পাওয়ায় চাঁইয়ালরা নতুন চাঁই কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। অন্যান্য বছর যেখানে আমরা গড়ে একজনে ১৫/১৬ হাজার চাই বেচি সেখানে এবার গড় ১০ হাজার করে হবে কিনা সন্দেহ আছে। তাই নতুন করে চাঁই বানানোর কোনো খুচরা মালামাল আনছি না। যেগুলো আছে সেগুলোই বেচা হলেই চলে যাবো। কারিগররা হয়তো ২/১ দিনের মধ্যেই চলে যাবেন।

তাঁরা আরো বলেন, নদী ও খাল-বিলে পানি কম হওয়া এবং চায়না রিং চাইয়ের প্রভাবে দেশীয় প্রযুক্তির চাই অনেক চাঁইয়াল কিনতে চাচ্ছেন না। একটি চাঁই তৈরিতে তাদের খরচ হয় ৪৩-৪৫ টাকা। সেটা খুচরা বেচা হয় ৫০ থেকে ৫৫টাকা। আবার বাজার ভালো হলে ৬০ টাকা পর্যন্ত যায়।

কারিগর বিধান চন্দ্র সরকার, সমির চন্দ্র সরকার ও নিখিল বৈদ্য বলেন, আমাদের মতলবের গ্রামে সারাবছরই নানান ধরণের চাঁই পাতা যায়। সেখানে আমরা সারাবছর চাঁই তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করি। বাঁশ কেনা, বাঁশ ভিজানো, শুকানো, কাঠি করা, সুতা করা, সেগুলো আবার আলাদা আলাদাভাবে খুচরা আকারে তৈরি করা হয়। ১০ মাসের কাজের ফসল হিসেবে মৌসুমে মাত্র দুই থেকে আড়াই মাসের জন্য আমরা মহাজনের সঙ্গে এখানে আসি। প্রতিটি অংশ খোলা আকারে বানানোর পর এখানে আনা হলে আমরা এসে ওইগুলো বেঁধে পুরো একটি চাঁই বুনে দেই। কিন্তু যেভাবে বাজারে রিং চাইয়ের প্রভাব বাড়ছে ভবিষ্যতে আমরা এ পেশায় থেকে সংসার চালাতে পারবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। পেশার অস্তিত্ব নিয়ে আমরা হতাশাগ্রস্ত।

চাঁইয়ের মাছ বেচে সংসার চলে চাঁইয়াল হিসেবে পরিচিতি জেলে আবুল কালামের। তিনি বলেন, দেশীয় চাঁইয়ের প্রধান মাছ হচ্ছে চিংড়ি, যা স্থানীয় ভাষায় ‘ইছা মাছ’ নামে পরিচিত। রিং চাইয়ে ছোট-বড় সব ধরণের মাছ ঢুকে যায় এবং অল্প খরচে আরো বেশি লাভবান হওয়ার আশায় তাঁরা এ বছর এটি বেশি কিনছেন। দেশীয় চাঁইয়ে দেওয়া খাবার খেতে চিংড়িসহ অন্যান্য নির্দিষ্ট আকৃতির মাছ প্রবেশ করে। কিন্তু চায়না রিং চাইয়ে ¯্রােতের টানে জোরপূর্বক ছোট থেকে বড় সব প্রজাতির মাছ প্রবেশ করতে হয়। এখানে খাবার দেওয়ার কোনো ঝামেলাও নেই। এ কারণে চাঁইয়ালরা রিংয়ে ঝুঁকছেন। এতে কম পরিশ্রম ও খরচে বেশি টাকা আয় করা যায়। এছাড়া দেশীয় চাই এক মৌসুমেই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু রিং চাই অনেক বছর ব্যবহার করা যায়।

চর ইন্দুরিয়া আলতাফ মাষ্টার মাছ ঘাটের তত্ত্বাবধায়ক জয়নাল আবেদীন দেওয়ান বলেন, এ বছর এমনিতেই নদী ও খাল-বিলে মাছ কম। তাই চাঁইয়ের মাছ নেই বললেই চলে। ঘাটেও মাছের সরবরাহ কম। এ কারণে মাছের ব্যবসায়ীরা যেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি চাঁইয়ের ব্যবসায়ী ও চাঁইয়ালরাও অনেক লোকসানের মুখে। তবে রিং চাইয়ের কারণে দেশীয় চাঁইয়ের ব্যবসায় এবার মন্দাভাব চলছে।

রায়পুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (অ:দা) মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তণ বা প্রাকৃতিক কারণে এবার এমনিতেই নদী ও খাল-বিলে পানি কম। তাই এখন পর্যন্ত মাছের সরবরাহও কম। তবে আশা করা যায় পানি বাড়তে থাকলে মাছও বাড়বে। দেশীয় প্রযুক্তির চাঁইকে আমরা উৎসাহিত করি। রিং চাই সম্পূর্ণ অবৈধ। এগুলো ধ্বংসে সহসা অভিযান চালানো হবে।

 





আর্কাইভ