শনিবার ● ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » রাজনীতি » ভাষা সংগ্রামী এম, আব্দুল হামিদ
ভাষা সংগ্রামী এম, আব্দুল হামিদ
আমিরুল ইসলাম রাঙা
পাবনা শহরের প্রধান সড়ক আব্দুল হামিদ রোড যার নামে নামকরণ করা হয়েছে - সেই আব্দুল হামিদ সম্পর্কে এই প্রজন্মের অনেকের জানা নাই। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা। অবিভক্ত ভারতবর্ষের আইন পরিষদ সদস্য ( এম,এল,এ) এবং পাবনাবাসীর কাছে ছিলেন এক মহৎপ্রাণ ব্যক্তি।
এম, আব্দুল হামিদ ১৮৮৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আবুল মাকসুদ ছিলেন ব্রিটিশ আমলের ডিভিশন্যাল ইন্সপেক্টর অফ স্কুলস্ এবং দাদা ছিলেন মুন্সেফ।
এম, আব্দুল হামিদ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা সমাপ্ত করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ হলে প্রথম বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে সদস্য ( এম,এল,এ) নির্বাচিত হন। ১৯৪৫ সালে তাঁকে” খাঁন বাহাদুর ” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শরীক হলে ” খান বাহাদুর ” উপাধি প্রত্যাখান করেন। তিনি বৃহত্তর পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন।
১৯৪৬ সালে পাকিস্তান ইস্যুর নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী হিসেবে পুনরায় এম,এল,এ নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলায় ভয়াবহ দাঙ্গা শুরু হলে তিনি পাবনা অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে যথেষ্ট সফল হন।
এম, আব্দুল হামিদ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের প্রথম গণপরিষদ সদস্য ( এম,সি,এ) নির্বাচিত হন। তিনি পাবনা জেলা বোর্ডের সদস্য এবং পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
এম, আব্দুল হামিদ ১৯৪৮ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৫২ সালে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে যে কয়েকজন মুসলিম লীগ নেতা অবস্থান নেন তাঁদের মধ্যে এম, আব্দুল হামিদ ছিলেন অন্যতম। ১৯৫২ সালের ৫ এপ্রিল পাকিস্তানের করাচীতে গণপরিষদের অধিবেশনে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ঐদিন গণপরিষদ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদান করার পরেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে করাচীর জিন্নাহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে জোড়ালো বক্তব্য প্রদান করায় তৎকালীন সরকার তাঁর প্রতি রুষ্ট হন। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রছন্ন ইঙ্গিতে ডাক্তার এবং নার্স তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শন করেন। এরই এক পর্যায়ে ১৯৫২ সালের ৮ এপ্রিল ভোররাতে করাচী জিন্নাহ হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকার তাঁর পরিবারের অনুমতি না নিয়েই ঐদিন বিকালে করাচীতে তাঁকে সমাহিত করেন।
এম, আব্দুল হামিদ মৃত্যুকালে তাঁর স্ত্রী এবং সাত ছেলে এক মেয়ে রেখে চিরবিদায় নেন। তাঁর সন্তানেরা হলেন আবুল মনসুর কোরাইশী, আবুল নাছার কোরাইশী, আবুল ফজল কোরাইশী, আবুল আতা কোরাইশী, হামেদ মাহমুদ কোরাইশী, নকসরৎ আলী কোরাইশী, আনসার আলী কোরাইশী এবং লতিফা বেগম।
উল্লেখ্য এম, আব্দুল হামিদ সাহেবের পঞ্চম পুত্র হামেদ মাহমুদ কোরাইশী পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ ছাত্র সংসদের ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সালে দুই মেয়াদে জি,এস ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। আব্দুল হামিদ সাহেবের এক পুত্রবধু হাসিনা কোরাইশী আশির দশকে পাবনায় সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে আব্দুল হামিদ সাহেবের একমাত্র পুত্র আনসার আলী কোরাইশী জীবিত আছেন। তিনি চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করেন।
লেখক
রাধানগর, পাবনা।