সোমবার ● ৮ নভেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে বহিরাগতদের দাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
কমলনগরে বহিরাগতদের দাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) ঃ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে বহিরাগতদের দাপটে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। প্রিজাইডিং নিয়োগেও আপত্তি তুলেছেন তারা। এছাড়াও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা, মাইক ছিনতাই, হুমকি ও মারধরের অভিযোগ করা হয়। সংঘাত ও প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনে প্রত্যেক কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করছেন চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা।
সোমবার (৮নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার হাজিরহাট উপকূল কলেজ মিলনায়তনে নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ও পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামানের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রার্থীরা এসব উদ্বেগের কথা জানান এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি করেন। এ সময় প্রশাসনও সুুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দেন।
সভায় চরকাদিরা ইউনিয়নে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আশ্রাফ উদ্দিন রাজন রাজু (মোটরসাইকেল) প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ এনে বলেন, তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নির্বাচনে জিততে পছন্দের প্রিজাইডিং নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করেছেন। একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইব্রাহিম বাবুল মোল্লা (চশমা) বলেন, চরকাদিরা ইউয়িনের প্রত্যেকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। কেন্দ্র ভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হলে সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত নির্বাচন হবে বলে আশা করছেন। ইসলামী আন্দোল বাংলাদেশের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ(হাতপাখা) তার বক্তব্যে বহিরাগতদের প্রভাবমুক্ত নির্বাচন চান। চরকাদিরা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম সাগর (নৌকা) বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার ইউনিয়নে মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। তিনি মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন।
মতবিনিময় সভায় চরমার্টিন ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গির আলম (মোটরসাইকেল) বলেন, তার প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউছুফ আলীর লোকজন তার নির্বাচনী প্রচারণার বাধা দিচ্ছেন, তার প্রচারের সময় মাইক ছিনতাই এবং অপরেটরকে মারধর করে মোবাইল নিয়ে যায়। এ সব বিষয়ে রির্টানিং কর্মকর্তা কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেও জানান। স্বতন্ত্র প্রার্থী মাকছুদুর রহমান (আনারস) বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন তার মাইকিং উঠান বৈঠকসহ কোন প্রচারণা করতে দিচ্ছেনা এবং হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে। সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে অভিযোগ করেন। একই ইউনিয়নের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখার প্রার্থীর লোকজনকেও মারধর করার অভিযোগ করা হয় ওই সভায়। চরমার্টিন ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ইউছুফ আলী মিয়া বলেন, মেম্বার প্রার্থীদের আত্মীয়-স্বজনরা নির্বাচনী এলাকায় আসার কারণে এখানে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। তিনিও সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেন।
এদিকে চরলরেন্স ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেও সদস্য প্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী বর্তমান মেম্বার মো. ইসমাইল হোসেনসহ অন্যান্য প্রার্থীরা প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের দাবি জানান।
জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ আবাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন দিতে আমরা প্রস্তুত। আমরা নির্বাচনী আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। কোন অন্যায়কারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ কোন বিশেষ সুবিধা পাবেনা না।
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে। আমরা বিন্দুমাত্র নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যত্যয় ঘটতে দিবনা। এ সময় তিনি সকল প্রার্থীদের সচেতন হতে বলেন এবং নির্বাচণী অচরণ বিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন।
নির্বাচনের আচরণ বিধি প্রতিপালনে ওই মতবিনিময় সভায় কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুদম পুষ্প চাকমা, কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন, রির্টানিং কর্মকর্তা ড. জায়েদুল হোসেন চৌধুরী।
কমলনগর সভা শেষে রামগতি উপজেলার চরগাজীর ইউনিয়নের প্রার্থীদের সাথেও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসঙ্গত, ১১নভেম্বর দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে কমলনগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে এবং রামগতির একটি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।