বৃহস্পতিবার ● ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচী প্রকল্পের সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দের অধিকাংশই লোপাটের আশঙ্কা
কমলনগরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচী প্রকল্পের সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দের অধিকাংশই লোপাটের আশঙ্কা
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে অতি দরিদ্রদের জন্য ৪০দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্রদের দিয়ে এ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও কিছু কাজ করা হয়েছে ভেকু দিয়ে। ভেকু দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে খাল কেটে রাস্তা সংস্কার করা হলে পাড় ভেঙে ঝুঁকিতে রয়েছে আশপাশের বসতিরা। ফলে দরিদ্র শ্রমিকরা হচ্ছেন উপেক্ষিত, নেই নারী শ্রমিকও। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের তদারকি করার কথা থাকলে সাবাই ঘুমে। এমন কর্মকান্ডে সরকারের লক্ষ উদ্দেশ্য ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯ ইউনিয়নে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪ কোটি ৪১লাখ ৭৬হাজার টাকা। প্রতিদিন ২হাজার ৭শ’ ৬১জন শ্রমিক কাজ করার কথা। প্রতি শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ৪শ’ টাকা করে প্রতিদিনের বরাদ্দ ১১লাখ ৪হাজার ৪শ’টাকা। এ ছাড়াও এ কর্মসূচীতে ননওয়েজ প্রকল্পে ২০লাখ ২৮হাজার ২শ’ ৬০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ইউনিয়নগুলোর উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ আসলেও যথাযথ বাস্তবায়ন না হয়ে হচ্ছে লুটপাট।
সরেজমিন উপজেলার পাটারিরহাট ইউনিয়নের ৫প্রকল্প ঘুরে মাত্র একটি প্রকল্পে শ্রমিক পাওয়া গেছে। ওই প্রকল্পে ৪৫জন শ্রমিক কাজ থাকার কথা থাকলে পাওয়া গেছে ১২জন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাইমারা খালের উত্তর পাড় রাস্তা ভেকু দিয়ে কাজ করা হয়েছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে খাল থেকে মাটি কাটায় খালের পাড় ভেঙে পড়েছে। এতে অর্ধশত পরিবার হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোন মুহূর্ত্বে তাদের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে খালে পড়তে পারে।ওই ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পের জন্য দৈনিক শ্রমিক ২৩০জন । ৪০দিনের জন্য বরাদ্দ ৩৬লাখ ৮০হাজার টাকা। ননওয়েজ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১লাখ ৬৮হাজার ৬শ’ ৪৭টাকা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে নামে মাত্র কাজ করে সব টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালপাড়ের কয়েকজন ভুক্তভোগী পরিবার জানান, মেঘনার ভাঙনে সহায় সম্বল হারিয়ে এখানে সামান্য জমি কিনে মাথা গোজার ঠাই নিয়েছি। রাজু উকিল আমাদের সর্বনাশ করছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ বিষয়ে পাটারিরহাট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. নুরুল আমিন রাজুর কাছে জানতে চাইলে তিনি নিউজ এ্যাডভান্সকে বলেন, খালের পাড় ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। আমি ওই এলাকায় যাবো খতিগ্রস্ত এলাকা দেখে ব্যবস্থা নিবো।
এছাড়াও চরকাদিরা ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ৩শ’ ২৩জন শ্রমিক ৪০ দিনের এ কর্মসৃজন কর্মসূচীতে কাজ করার কথা থাকলে সরেজমিন ঘুরে কোন প্রকল্পে শ্রমিক পাওযা যায়নি। ওই ইউনিয়নের বর্ডার রাস্তা সংস্কারে তিনি নিজ তদারকিতে কাজ করার কথা থাকলেও ১৫-১৬জন শ্রমিক দিয়ে নামে মাত্র কাজ করে বন্ধ করে দিয়েছেন। ওই ইউনিয়নে ৩শ’২৩জন শ্রমিকের দৈনিক মজুরী ৪শ’ টাকা করে ৪০দিনে ৫১লাখ ৬৮হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়াও ননওয়েজ প্রকল্পে ২লাখ ৩৭হাজার একশ’ ৯৪টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
এ বিষয়ে চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাও. খালেদ ছাইফুল্লাহ নিউজ এ্যাডভান্সকে বলেন, আমার ইউনিয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন টাকা পায়নি। টাকা না পাইলে কাজ করাবো কিভাবে। টাকা পাইলে আমার ইউনিয়নে শতভাগ কাজ আমি করবো এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি যা করেছি অন্য ইউনিয়নেগুলোতে আমার অর্ধেক কাজও হয়েনি বলে তিনি আরও বলেন।
এ দিকে চরলরেন্স এ ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পে দৈনিক ২শ’ ৯১ জন শ্রমিক কাজ করার কথা। কিন্তু ভেকু দিয়ে ২টি রাস্তা সংস্কার করা হলেও কোন প্রকল্পে শ্রমিক পাওয়া যায়নি। ওই ইউনিয়নে প্রতি শ্রমিকের মজুরী ৪শ’ টাকা করে ৪০দিনের জন্য বরাদ্দ ৪৬লাখ ৫৬হাজার টাকা। এছাড়াও ননওয়েজ প্রকল্পে ২লাখ ১৩হাজার ৮শ” ৮৯টাকা বরাদ্দ হয়। নামে মাত্র কাজ করে বাকি টাকা লুট পাট করার পায়তারা চলছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
চরলরেন্স ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন মাষ্টার জানান, আমার ইউনিয়নে সরকারের সকল বরাদ্দ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের পাশাপাশি আমি নিজ উদ্যোগেও কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলার এ তিনটি ইউনিয়ন ছাড়াও বাকি ইউনিয়নগুলোতেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
মুঠোফোনে কমলনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জহিরুল ইসলামের কাছে প্রকল্পের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি প্রত্যেক ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তাদের (ট্যাগ অফিসার) নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।