সোমবার ● ২৮ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » লক্ষ্মীপুরের হাজিরপাড়াতে আ’লীগের দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি সম্মেলের ডাক, উত্তেজনা
লক্ষ্মীপুরের হাজিরপাড়াতে আ’লীগের দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি সম্মেলের ডাক, উত্তেজনা
লক্ষ্মীপুর প্রতিনধি
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। আগামী ২৯ মার্চ দু’পক্ষ পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের ডাক দিয়েছে।
এনিয়ে রবিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে হাজিরপাড়া বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে একপক্ষ।
তাদের অভিযোগ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু নিজের পছন্দের লোক দিয়ে হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছেন। সে জন্য বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতাদের না জানিয়ে তার নিজের বাড়িতে সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবিদার আবুল কাশেম খানের সভাপতিত্বে ২৯ মার্চ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বাড়ির (হাজিরপাড়া মিয়া বাড়ি) সামনে এ আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক আবুল কাশেম চৌধুরী। এতে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুকে প্রধান অতিথি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নকে প্রধানবক্তা করে দাওয়াত পত্র বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করায় ফুঁসে উঠেছে ওই ইউনিয়নের সাধারণ নেতাকর্মীরা।
রোববার বিকেলে আওয়ামী লীগ নেতা পিংকুর বাড়ির সামনে আয়োজিত সম্মেলনকে ‘ঘরোয়া ও তথাকথিত’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজিরপাড়া বাজারে ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভকারীরা জানায়, একচেটিয়া অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলন সম্পর্কে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল হোসেন, সহ-সভাপতি নুরুল আলম কাজল, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রহিম, মাহবুবুর রহমান আনসারী মুরাদসহ যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগের কাউকেই সম্মেলন সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা পিংকু হাজিরপাড়ায় ‘পকেট কমিটি’ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এতে আবুল কাশেম খানকে ভূয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে নিজ বাড়িতে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। একক সিদ্ধান্তে গঠনতন্ত্র বিরোধী তাদের ঘরোয়া ও তথাকথিত সম্মেলন বন্ধ করতে হবে।
তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, একচোটিয়া সম্মেলন বন্ধ না করা হলে এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আমরা হাজিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পাল্টা সম্মেলনের আয়োজন করবো।
এছাড়া কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানি বলেন, আমি বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ইউনিয়নে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, কিন্তু আমাকে জানানো হয়নি। আমি ফেজবুকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। নিয়ম ছিলো- কমিটির নেতৃবৃন্দ সম্মেলনের আয়োজন করবে। কিন্তু সে নিয়ম মানা হয়নি। জেলা সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বাড়িতে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। তার পছন্দের লোককে কমিটিতে আনতে তিনি অন্ধকার কক্ষে সম্মেলনের আয়োজন করাচ্ছেন। ওনার প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, সবার অংশগ্রহণে জনসম্মুখে সম্মেলনের আয়োজন করার।
বিক্ষোভকারীরা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, তারা ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ছিলো। তাদেরকে কেন সম্মেলন সম্পর্কে জানাতে হবে? ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। আমাকে অতিথি করে দাওয়াত দিয়েছেন। এটা সভাপতির ইউনিয়ন। তারা চায় আমার ইউনিয়নটা এলোমেলো থাকুক।
এতো জায়গা থাকতে বাড়িতে কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে হাজার হাজার লোক হবে, বাহিরে দিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আর সবার জন্য আমার বাড়িতে খাবারের আয়োজন করছি। আমার বাড়ির সামনে আয়োজন করতে পারবো না সাংগঠনিকভাবে এ ধরণের কোন নিয়ম নেই।
নিজের পছন্দের লোককে কমিটিতে আনার পাঁয়তারার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি যদি মনে করি একটা ইউনিয়নের কমিটি করবো, তাহলে তো সম্মেলনের প্রয়োজন নেই’ আমি এমনিই নিয়ে যেতে পারি। কিন্তু সম্মেলনের মাধ্যমেই কমিটি গঠন করা হবে।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, পাল্টাপাল্টি সম্মেলনের বিষয়টি আমরা জানি না। বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সতর্ক রয়েছি।
প্রসঙ্গত, চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচন করায় ১৬ ডিসেম্বর হাজিরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামছুল ইসলাম বাবুল পাটওয়ারীকে বহিস্কার করা হয়। পরে ইউনিয়ন কমিটির সকল নেতাকর্মীর সিদ্ধান্তে সহ-সভাপতি কামাল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কমিটির আরেক সহসভাপতি আবুল কাশেম খান হঠাৎ নিজেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করেছেন।