শুক্রবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় » নয়া জোটের আত্মপ্রকাশ যে কোন সময়ে !
নয়া জোটের আত্মপ্রকাশ যে কোন সময়ে !
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
ঢাকা : দ্বী- দলীয় রাজনিতীর বাহিরে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের লক্ষ্যে নয়া জোটের আত্মপ্রকাশ যে কোন সময়ে। জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হয়েছে। কয়েকটি ইস্যুতে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৈঠক করেছেন সাতটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সন্ধ্যার পর থেকে অন্তত দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বর্তমান দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে আগামী নির্বাচন অবাধ হবে না- এমন অবস্থানে দলগুলো একমত প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন অংশগ্রহণকারী নেতারা।
সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে জেএসডির সভাপতি আ স ম রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর, ভাসানী অনুসারী পরিষদের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ এই দলগুলোর অন্য নেতারাও অংশগ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘বৈঠকে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন নয় ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এই অবস্থানের সঙ্গে সমমনা সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।’
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা সমমনা দলগুলো দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি কাজ করছি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য। এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা চলছে।’
একটি দলের শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো, কাজের পরিধি, মেয়াদকালসহ নানা বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। তবে প্রক্রিয়াটিকে রাজনৈতিক জোট হিসেবে বিবেচনা না করে ‘রাজনৈতিক মঞ্চ’ হিসেবে দেখছেন উদ্যোক্তারা।
বৈঠকে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকারের সরে যাওয়ার জন্য আমরা একটা কিছু করার চেষ্টা করছি।’
বৈঠকে ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাগরিক মঞ্চ গড়ে তোলার আলোচনা হয়েছিল। সে আলোচনার ধারাবাহিকতাই এই রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে তোলার উদ্যোগ। আজকের সভায় সবাই একই স্বরে কথা বলেছেন। সুনির্দিষ্ট কথা হয়েছে, কীভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা যায়, কীভাবে এই সরকারের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা সামনের দিনে আরও হবে।’
জোটের নেতারা আলাপকালে জানিয়েছেন, রাজনৈতিকভাবে অনেকগুলো বিষয় সামনে থাকলেও আপাতত বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবিটিকেই সামনে রাখছেন নতুন এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরা। ঈদের পর উদ্যোক্তা একটি রাজনৈতিক দলের অফিসে বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে সাত সংগঠনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হতে পারে। তবে এই মঞ্চে আগ্রহী দলগুলোর যোগ দেওয়ার পথও খোলা থাকছে, এমন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছেন একাধিক নেতা।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর জানান, রাজনৈতিক ঐক্য হতে সময় লাগে। বিভিন্ন দলের নেতাদের বিভিন্ন মতামত থাকে। কিন্তু এরইমধ্যে বৈঠক করে নেতাদের সঙ্গে পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে।
নুর বলেন, ‘কার কী আপত্তি এসব শেষ হয়ে এখন মোটামুটি আমরা অনেক বিষয়ে একটি জায়গায় এসে পৌঁছেছি। বর্তমান সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া- এ বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা। এরপর নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সেই সরকারের মেয়াদ নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু আগে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এসব কিছু ঠিক হবে। আমরা নাম, সময় নিয়ে ভাবছি না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি। আগামী মে মাস থেকে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে তা দৃশ্যমান হবে।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘আমরা সাতটি সংগঠন তিনটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। এই সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচন হবে না, আমরা সে নির্বাচনে যাবো না। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা, সে সরকারেরর মেয়াদ কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর হবে। এরপর সংবিধান সংশোধন করতে হবে।’
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালি, নঈম জতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি’র কার্যকরী সাধারন সম্পাদক জনাব শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।