বৃহস্পতিবার ● ১৮ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন, জানেন না কমলনগরে ভাঙনের শিকার আনোয়ার ও আমির উল্যাহ
পরিবার নিয়ে কোথায় যাবেন, জানেন না কমলনগরে ভাঙনের শিকার আনোয়ার ও আমির উল্যাহ
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আনোয়ার উল্যাহ। তার ভাই আমির উল্যাহসহ ৫ভাই জন্মের পর থেকে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের জমাদার বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। তাদের পরিবারের প্রায় ২০ ছেলে মেয়ে সবাই ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। গত ২-৩ দিনে মেঘনায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকষ্মিক ভাঙনের মুখে পড়েন ওই পরিবার। উপায়ান্ত না পেয়ে ঘর ভেঙ্গে রাস্তার পাশে স্তুপ করছেন। কোথায় যাবেন জানেন না তারা। শুধু জানেন মেঘনায় তাদের প্রায় শত বছরের বাড়ি গিলে খাচ্ছে। এখন সরতে হবে। সরজমিন গিয়ে দেখা যায় গত দুই দিন থেকে শেষ সম্বল ঘর ও গাছ-পালা কেটে স্তুপ করছেন। দুই দিনে এক বেলা খবারও ভাগ্যে জোটেনি তাদের। পাশের দোকান থেকে পাউরুটি খেয়ে পরিবারের সাবাই শেষ সম্বল রক্ষার চেষ্টা করছেন। কথা হয় আরেক ভাই আমির উল্যাহর সাথে, তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘সবাই গরীবের জন্য কাঁদে, কই আজ দুই দিন কেউতো এক বেলা খাবার নিয়েও আসলো না’ পরিবারের সবাই খেয়ে না খেয়ে আছি। চোট্ট একটা ঝুপড়ী ঘরে বর্তমানে প্রায় ৫০-৬০জনের বসবাস। তিনিও কোথায় যাবেন জানেন না। শুধু মেঘনার ভাঙন থেকে শেষ সম্বল রক্ষার চেষ্টা করছেন। তাদের মত পাশে আরেক পুরনো ফরাজি বাড়িতেও চলছে একই চিত্র। ৭০ বছরের পুরনো ৩একর জমিতে নির্মিত ওই ফরাজি বাড়িতে ছিলো প্রায় ২০ পরিবারের বসবাস। বর্তমানে ওই বাড়িতে একজন সংরক্ষিত নারী সদস্য রয়েছে। তারাও মেঘনার ভাঙনে ঘর-বাড়ি হারিয়ে অন্যের জায়গায় আশ্রিত। এদিকে, জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলী জমি, রাস্তাঘাট ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ সরকারের অনেক স্থাপনা। সব হরিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন মাসে ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন হয়। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের কাজ। এ দিকে প্রতিনিয়ত ভাঙছে মেঘনা। লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভারে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন আরো তীব্র হচ্ছে। গত ২-৩ দিনের ভাঙনে দু’ উপজেলার প্রায় এক হাজার পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। ৩০ বছরে মেঘনা নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দা। এ সময় বাঁধ নির্মাণের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে আরো বিস্তৃর্ণ জনপদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মেঘনার ভাঙনের শিকার আইয়ুব নগর চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. আবু তাহের ফরাজি বলেন, গত বছর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ৩১শ’ কোটি টাকর প্রকল্পা পাশ হয়। প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। গত ২ দিনের আকষ্মিক ভাঙনে আমাদের ৭০বছরের পুরনো বাড়ি হারিয়ে আমরা এখন আশ্রিত। আমাদের পরিবারের কে কোথায় যাবেন কেউ জানে না।
চরফলকন ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, মেঘনার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কোন কাজ না হওয়ায় ২শ’ বছরের ৩০ একরের পুরনো ছফর আলী হাওলাদার বাড়িসহ ওই বাড়ির সামনে ক্লিনিক ভাঙনের মুখে পড়েছে। বর্তমানে ওই বাড়ির সকল পরিবার বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এ ছাড়াও যে কোন মুহুর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারে চরফলকন ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সেসহ অনেক স্থাপনা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, ঠিকাদার চাঁদপুর থেকে বালু এনে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করতো। কিন্তু সেখানে বালু সংকটের কারণ দেখিয়ে তারা সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছে।