শুক্রবার ● ২৬ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » মেঘনা উপকূলীয় মানুষের গোলাঘর ‘মটকা’ এখন গলার কাঁটা
মেঘনা উপকূলীয় মানুষের গোলাঘর ‘মটকা’ এখন গলার কাঁটা
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : গ্রামাঞ্চলে যেকোনো পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্রের একটি হলো মটকা। আবার ছোট ছোট পরিবারগুলোর গোলাঘর হিসেবে পরিচিত এ মটকা। কারও কারও কাছে মুটকি হিসেবেও পরিচিত। এমন কোনো বাড়ি নেই, যে বাড়িতে পরিবারের প্রয়োজনীয় এ মটকা নেই। বছরের শুরুতে গ্রামের পরিবাররা এ মটকাতে চাল-ডাল, ধান, গমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য মজুদ করে রাখা হয়। আবার অনেকে যেকোনো ফসলের বীজ সংরক্ষণ করে রাখতো এ মটকাতে। কিন্তু মেঘনার ভাঙনে বিলীন হওয়া পরিবারগুলোর এ মটকা এখন গলার কাঁটা। মেঘনায় যাদের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে ওই পরিবারগুলোর পক্ষে এ মটকা তাদের সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে ফেলে অথবা নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে যেতে হয় তাদের। জানা যায়, ষাটের দশক থেকে ৯০এর দশক পর্যন্ত কুমার পল্লীতে তৈরি হতো মটকা। তখন থেকে এগুলো বিক্রি হতো ২ থেকে ৩শ’ টাকায়। প্রকার ভেদে এর ওজন ৪ থেকে ৫ মণ হওয়ায় সব সময় নাড়াচাড়া করা সম্ভব হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ফেলে যেতে হয়। মেঘনার ভাঙনের শিকার আইয়ুবনগর চরফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, উপকূলীয় এলাকা রামগতি-কমলনগরের এমন কোনো পরিবার নেই যে পরিবারে দুই-তিনটা মটকা না আছে। কালের বিবর্তনে সবাই এখন প্লাস্টিক অথবা টিনের ড্রাম ব্যবহার করায় এ মটকার কদর কমে গেছে। কিন্তু মেঘনার ভাঙনে যাদের বাড়ি-ঘর বিলীন হচ্ছে তারা নিরূপায় হয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ মটকা ফেলে চলে যাচ্ছেন। ফলে বিলুপ্ত হচ্ছে সাধারণ কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের গোলাঘর নামে খ্যাত এ মটকা। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙছে মেঘনা। মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট, ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ পুরনো অনেক স্থাপনা। দীঘদিন থেকে মেঘনা নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ভিটেমাটি হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। গত বছরের জুন মাসে ‘লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার বড়খেরী ও লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) অনুমোদন হয়। ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। একই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ই জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের সময় সামান্য কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের কাজ। এ দিকে প্রতিনিয়ত ভাঙছে মেঘনা। লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভারে নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে। এ সময় বাঁধ নির্মাণের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে আরও বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।