বৃহস্পতিবার ● ৩ আগস্ট ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরে নির্ধারিত মূল্যের ১০গুন খাজনা আদায় করছেন ইজারাদাররা
কমলনগরে নির্ধারিত মূল্যের ১০গুন খাজনা আদায় করছেন ইজারাদাররা
ইউছুফ আলী মিঠু, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের বিভিন্ন হাটবাজারে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৯থেকে ১০ গুন বেশি খাজনা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রশাসনের সঠিক মনিটরিং না থাকায় আদায়কারীদের চাপের মুখে ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে বহু গুনে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসলে গত ২৫ জুলাই প্রত্যেক ইজারাদারকে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের টোল আদায়ের তালিকা প্রকাশ্যে টাঙানোর জন্য চিটি দেওয়া হয়। চিটিতে উল্লেখ করা হয় ২৭ তারিখের মধ্যে ইজাদাররা প্রত্যেক বাজারে তালিকা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে এবং নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি টোল আদায়ের প্রমান পাওয়া গেলে তার ইজারা বাতিল করা হবে। কিন্তু এ নির্দেশনার পরও উপজেলার কোন বাজারে মূল্য তালিকা প্রদর্শন করতে দেখা যায়নি। খাজনা (টোল) আদায়কারীরা উপজেলা প্রশাসনের এ চিঠিকে আমলে না নিয়ে তাদের ইচ্ছেমতো শোষণ করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের। সরকারি দর না জানায় ক্রেতা-বিক্রেতারা ইজারাদারদের দাবিকৃত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার আদায়কারীদের দাবিকৃত খাজনা না দিলে তাদের বিক্রয় পন্য আটকিয়ে রাখা হয়। অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে।
এ উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার হাজিরহাট ও তোরাবগঞ্জ গিয়ে দেখা যায়, বাজারে সরকার নির্ধারিত কোনো খাজনার সার্ট টাঙানো নেই। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি দর সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। খাজনা আদায়কারীরা যে টাকা চান, তা-ই তাঁদের দিতে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় হাজিরহাট বাজারে মাছ বিক্রেতা ৫০০ টাকা, কাঁচামাল-সবজি বিক্রেতা চটিপ্রতি ২৫০ টাকা, মসলা ২০০ থেকে ২৫০, ভ্রাম্যমাণ খাদ্যপণ্য ১৫০, বাঁশের তৈরি ঝুড়ি-ঝাঁকা ২৫০ ও পান বিক্রেতাদের ১৮০ টাকা খাজনা দিতে হয়। এর বাইরে পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতি হাটে বিপুল পরিমাণ খাজনা তোলা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ট্রাক ও পিকআপের মাল লোড-আনলোড করলে ২০০-৩০০টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়।
তবে সহকারী কমিশনার স্থানীয় সরকার লক্ষ্মীপুর শাখার নির্ধারিত সরকারি দর বাজারে দোকান অনুযায়ী ১৫ থেকে সর্বোচ্চ মাংসের দোকান থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত টোল আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ইজারাদাররা ১৫০ থেকে ৫০০টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। শুধু হাজিরহাট ও তোরাবগঞ্জ নয়; কমলনগর উপজেলার করুনানগর, ফজুমিয়ারহাট, চরবসু বাজার, চরলরেন্স, করইতলা, ফাজিল ব্যাপারীরহাট, মুন্সিরহাট, চৌধুরী বাজার, পাটারিরহাট, খায়েরহাট, মাতব্বর হাট, বাঘারহাট, বলিরপুল বাজারসহ উপজেলার সবহাটে একইভাবে খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
তোরাবগঞ্জ বাজারের নিয়মিত লেবু ব্যবসায়ী আব্দুল বারিক বলেন, দু’টি টুরকিতে (কাগুজি) লেবু নিয়ে বসছি বিক্রি হউক বা না হউক ১৫০ টাকা দিতে হবে। ওই বাজারের শুটকি ব্যবসায়ী আ.রশিদ ও লাউ ব্যবসায়ী মইন উদ্দিন বলেন, এ বাজারে আসলেই ১৫০টাকা দিতে হবে। বেচা কিনা হউক বা না হউক। তারা আক্ষেপ করে বলেন, “এটা মহা দুর্নীতি। নীতি কথা বলার কেউ নেই।”
হাজিরহাট বাজারের মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী মো. হারুন বলেন, চৌমুহনী থেকে সামান্য কিছু ফল এনে বিক্রি করছি। এর জন্য ৪০০টাকা খাজনা দিতে হচ্ছে। দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয় বিধায় তারা যা বলে তাই দিতে হয়। ওই বাজারের নার্সারি ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, চারা বিক্রি হলেও ২৭০টাকা দিতে হবে না হলেও ২৭০ টাকা দিতে হয়। বেশি নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক বেশি নিচ্ছে। এ বাজার আর তোরাবগঞ্জ বজারে সব চেয়ে বেশি দিতে হয়।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, হাটবাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ফলে ভোক্তাপর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারি কোনো তদারকি নেই। অতি দ্রুত প্রতিটি হাটে সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা টানিয়ে দিয়ে সহনীয় পর্যায়ে খাজনা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
হাজির হাট বাজারের ইজারাগ্রহীতা ওমর ফারুক বলেন, উপজেলা থেকে টোল আদায়ের সার্ট টাঙানো বিষয়ে বলা হয়েছে। আমরা তালিকা বানাতে দিয়েছি। খাজনা বেশি আদায় করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সামনের দিকে আর বেশি নিব না।”
সরকারের নির্ধারিত তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত টোল কেন আদায় করছেন জানতে চাইলে তোরাবগঞ্জ বাজারের ইজারাদার মিজানুর রহমান পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস বলেন, বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত খাজনা নেওয়ার বিষয়ে নানা অভিযোগ পেয়ে প্রত্যেক ইজারাদারকে বাজারের জনসমাগম এরিয়াতে সার্ট টাঙানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা সার্ট টাঙাতে ব্যর্থ হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে ইজারা বাতিল করা হবে।