রবিবার ● ২২ অক্টোবর ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » কমলনগরের মেঘনায় জেগে ওঠা নতুন চরে ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন ভূমি হারানো অধিবাসীরা
কমলনগরের মেঘনায় জেগে ওঠা নতুন চরে ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন দেখছেন ভূমি হারানো অধিবাসীরা
ইউছুফ আলী মিঠু,, নিউজ এ্যাডভান্স
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা নতুন চরে চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করেছেন ভূমি হারানো অধিবাসীরা। গত বছর থেকে জেগে ওঠা চরকে চাষাবাদের উপযোগী করে তুলেছেন তারা। ফলে এসব চরের জমিতে চাষের উদ্দেশ্যেই সেখানে যাতায়াত শুরু করেছেন সে এলাকার অতীত অধিবাসীরা।
জানা যায়, ১২-১৩ বছর আগে থেকে মেঘনার ভাঙনে বিলীন হয় চর ঠুয়া, কটরিয়া ও চর মাতাব্বর। নিজেদের কিংবা পূর্ব পুরুষদের বসতি ছিল বর্তমানে নতুন জেগে ওঠা এ সব চর এলাকায়। শনিবার (২১ অক্টোবর) দুই শতাধিক অধিবাসী এবং কমলনগরের বিশিষ্ট আলেমদের নিয়ে খতমে ইউনুছ ও দোয়ার আয়োজন করে জেগে ওঠা চরের বাসিন্দারা। খতমে ইউনুছ দোয়ার মধ্য দিয়ে চাষযোগ্য ও বসতি স্থাপনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, হাজিরহাট হামেদিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাও জায়েদ হোছাইন ফারুকী, মাতব্বর নগর দারুচ্ছুনাত আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও আলী হোসাইন, চরফলকন ছিদ্দিকিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাও হাবিব উল্লাহ বাহার, হাজিরহাট হামেদিয়া কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক মাও মাকছুদুর রহমান, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাও গিয়াস উদ্দিন, মাও বোরহান উদ্দিন বাহার, মাতব্বর চরের মালিক বেলাল মাতাব্বর, ছিদ্দিক মাতাব্বর, আকতার শিকদার, মফিজ মাতাব্বর, জসিম উদ্দিন মাতাব্বর,মো নুরুজ্জামাম মাতাব্বর, জেবল হক মাতাব্বর, মো দুলাল মাতাব্বর, জামশেদ মাতাব্বর ও বশির মাতাব্বর প্রমুখ।
নতুন এ চরগুলো জেগে উঠেছে কমলনগর উপজেলার সাহেবেরহাট, চরকালকিনি ও চরলরেন্স সংলগ্ন পশ্চিম দিকে মেঘনা নদীর বুকে। চরগুলো বর্তমান আয়তন কত তা জানা যায়নি।
চরের বাসিন্দারা জানান, চাষাবাদের পাশাপাশি তারা নিজেদের হারিয়ে যাওয়া ভূমি আবার ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চাইবেন এবং প্রয়োজনীয় আইনের আশ্রয় নিবেন। এর আগে চরকালকিনি মৌজার চরকাঁকড়া বর্তমান ক্র্যাবআইল্যান্ড নামে পরিচিত চরে চাষাবাদ শুরু করেছেন ওই চরের বাসিন্দারা।
বর্তমান চর এলাকায় অতীতে বসত বাড়িসহ জমি হারানো বাসিন্দা আকতার শিকদার জানান, নতুন চর এলাকায় তাদের বাড়িসহ কৃষি জমি ছিল। কিন্ত মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে তারা সব সম্পদ হারিয়েছেন। এখন ১০-১২ বছরের ব্যবধানে সেখানেই আবার ভূমি জেগে উঠেছে। নতুন চরের মাটি ফসল ফলানোর জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে । তাই তাদের হারানো জমিতে চাষাবাদ শুরু করছেন তারা।
মো নুরুজ্জামান মাতাব্বর বলেন নদী ভাঙার কারণে কমলনগরে চাষের তেমন জমি নেই। অন্যদিকে দেশে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় প্রতিটি খালি জমিতে চাষাবাদের গুরুত্ব রয়েছে। এমন কিছু কারণে মেঘনার ভাঙনের পর জেগে ওঠা চরে সেখানকার সাবেক বাসিন্দারা ধান চাষ শুরু করেছেন।
হাজিরহাট হামেদিয়া কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাও জায়দ হোছাইন ফারুকী বলেন, সরকার সকল পতিত জমিতে চাষাবাদের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। মেঘনার জেগে ওঠা চরগুলোতে নতুন ভাবে চাষাবাদ শুরু হলে এ এলাকায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বলে আমার বিশ্বাস। এ ছাড়াও বর্তমানে খালি পড়ে থাকা এবং জনমানবহীন এ চরগুলো বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়। এতে চাষাবাদ শুরু হলে মানুষের যাতায়াত বাড়বে। যাতায়াত বাড়লে অপরাধ কমে যাবে এবং মেঘনার জেলেদের নিরাপত্তা বাড়বে।
স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন অফিস থেকে নেয়া তথ্যে জানা গেছে প্রায় ৩ যুগের বেশি সময় ধরে বর্তমান কমলনগর এলাকার মেঘনা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার চর কাঁকড়া মৌজা, চরকালকিনি, উত্তর চর কালকিনি, দক্ষিণ চর কালকিনি, দক্ষিণ চর লরেঞ্চ মৌজা নামের কয়েকটি মৌজা পুরোপুরি মেঘনায় বিলীন হয়ে গেছে। এসব এলাকার প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু এখন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই উপজেলার পশ্চিমে মেঘনার বুকে প্রায় হাজার হাজার একরের কয়েকটি নতুন চর জেগে উঠেছে। যে গুলোর মধ্যে চর কাঁকড়া, কটরিয়া,চরঠুয়া ও চর মাতাব্বর চাষাবাদ শুরু করেছেন নদীভাঙন কবলিত স্থানীয় বাসিন্দারা।