সোমবার ● ২২ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রামগতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার নিয়ে বানিজ্য
রামগতিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার নিয়ে বানিজ্য
নিজস্ব প্রতিনিধি, নিউজ এ্যাডভান্স
রামগতি (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার পূর্বপ্রস্তুতি শুরু করেছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করার জন্য ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ক্রয় নিয়ে বানিজ্য শুরু করেছে শিক্ষক নেতা। অভিযোগ রয়েছে, বিবিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমিতির রামগতি উপজেলা সভাপতি একেএম কামাল উদ্দিন তার সুবিধামত কোম্পানীর সাথে চুক্তি করে বাজারের নিন্মমানের ও কম দামের ইনফ্রারেড থার্মোমিটার সংগ্রহ করে উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তা বেশী দামে ক্রয় করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। উপজেলার ৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে ওই নিন্মমানের ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য ২-৩টি করে থার্মোমিটার প্রতিটি দুই হাজার টাকা করে মূল্য ধরারও অভিযোগ রয়েছে। অথচ বাজারে সচরাচর বিভিন্ন মানের এসব ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের বাজার মূল্য রয়েছে ৫শ থেকে ৭শ’ টাকা। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আহসান প্রতিনিয়ত প্রতিটি ক্লাস্টারে ক্রয় করা থার্মোমিটার গ্রহনে দায়িত্বে থাকা শিক্ষক প্রতিনিধিকে থার্মোমিটার ক্রয় করছে কিনা তা মোবাইল ফোনে খোজ-খবর নিচ্ছেন।
জানা যায়, কোভিড-১৯ মহামারির কারনে দীর্ঘ সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীদের লেখা-পড়ার কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিগগিরই বিদ্যালয় পুনরায় চালু করার সিন্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে করে বিদ্যালয় খোলার আগে পূর্বপ্রস্তুতি শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের জন্য বিদ্যালয় প্রস্তুত করতে নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
ওই নির্দেশনা মেনে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলার আগে যেসব পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া দরকার- তা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাশ্রয়ী মূল্যে কেনা এবং বিদ্যালয় আঙ্গিনা ও আসবাবপত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী চলমান প্রকল্প বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান-স্লিপ) এর বরাদ্দ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শরীরে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র ইনফ্রারেড থার্মোমিটারসহ অন্যান্য সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রয় করার জন্য উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন পধান শিক্ষক বলেন, উপজেলায় ৯৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সবকয়টি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যগণের সিন্ধ্যান্ত অনুযায়ী বাজার মূল্য যাচাই করে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ক্রয় করা কথা। কিন্তু একেএম কামাল উদ্দিন মোবাইল ফোনে এবং সরাসরি চাপ দিচ্ছেন তার থেকে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ক্রয় করার জন্য। এতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সম্মতি রয়েছে বলেও শিক্ষকদের হুমকি দেন। এই জন্য প্রধান শিক্ষকগণ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ভয়ে বাজারে নিম্নমানের ও কম দামের ইনফ্রারেড থার্মোমিটার তার থেকে বেশী দাম দিয়ে ক্রয় করতে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ে বাধ্যতামুলকভাবে ২-৩টি ইনফ্রারেড থার্মোমিটার প্রতিটি দুই হাজার টাকায় তার থেকে ক্রয় করতে হয়েছে। এসব নিম্নমানের ও কম দামের প্রতিটির ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের বাজার মূল্য রয়েছে ৫শ থেকে ৭শ’ টাকা।
প্রধান শিক্ষকগণ আরও অভিযোগ করে বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের সঠিক সময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করাতে গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে স্লিপ ফান্ডের অধীনে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করতে টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। উপজেলার সবকয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছ থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কিনে দেওয়ার নামে সাড়ে সাত লাখ টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে একেএম কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে যাচাই করে সাশ্রয়ী মূল্যে নিজেদের পচন্দমত ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয় করে স্কুলে স্থাপন করার কথা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন ক্রয়ের কোন বাধ্যবাদকতা নেই। অথচ একেএম কামাল উদ্দিন তার পছন্দের একটি কোম্পানীর কাছ থেকে এসব মেশিন কেনার জন্য প্রধান শিক্ষকদের চাপ দিয়ে ক্রয় করতে বাধ্য করান এবং এগুলোর দাম দেখানো হয়েছে দ্বিগুণ। বিদ্যালয়ে খোজ নিয়ে যানা যায়, প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ডিজিটাল হাজিরা মেশিনের জন্য ২০ হাজার টাকা গ্রহন করে কোম্পানীকে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।
এদিকে রামগতি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিবিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম কামাল উদ্দিন দাবি করেন শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনা করে কোয়ালিটি সম্পূর্ণ ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ক্রয় করা হয়েছে। এখানে কোন ধরণের অনিয়মের সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আহসান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে লাইন কেটে দেন।